মাটি ও ধ্বংসস্তূপের গল্প: আলী চেরির নতুন প্রদর্শনী!

প্রাচীন সভ্যতার স্মৃতি আর ধ্বংসস্তূপের নীরব সাক্ষী: আলী চেরির শিল্পকর্ম

যুক্তরাজ্যের গেইটসহেডের বাল্টিক সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি আর্টে সম্প্রতি শুরু হয়েছে শিল্পী আলী চেরির “হাউ আই অ্যাম মনুমেন্ট” শীর্ষক প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে শিল্পী অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছেন, যেখানে মাটির ব্যবহার এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

যুদ্ধের বিভীষিকা, উপনিবেশবাদের স্মৃতি এবং সংস্কৃতির অবক্ষয়—এই বিষয়গুলো শিল্পীর কাজে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

লেবাননের শিল্পী আলী চেরির জন্ম ১৯৭৬ সালে, যখন তাঁর দেশ গৃহযুদ্ধের মধ্যে ছিল। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ তাঁর শৈল্পিক চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।

তাঁর কাজে প্রায়শই দেখা যায়, মানুষ কীভাবে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকে। এই প্রদর্শনীতে শিল্পী বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন, যা দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করছে।

প্রদর্শনীতে মাটির তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে কয়েকটি কাঠামোয় প্রাচীন মুখোশ ও পাত্রের মতো জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করে।

শিল্পী যেন পুরোনো দিনের কোনো সংস্কৃতিকে নতুন রূপে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। এই ভাস্কর্যগুলোর মাধ্যমে শিল্পী ইতিহাস এবং স্মৃতির জটিলতা ফুটিয়ে তুলেছেন।

প্রদর্শনীতে “অফ মেন অ্যান্ড গডস অ্যান্ড মাড” শিরোনামের একটি ত্রিমাত্রিক ভিডিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সুদানে মাটি দিয়ে কীভাবে ইট তৈরি করা হয়, সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেছেন শিল্পী।

প্রাচীন নুবিয়ান পিরামিডের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের কাজ করার দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। ভিডিওটিতে মাটির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এবং সভ্যতার উত্থান-পতন সম্পর্কিত ধারণাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

মানুষ কীভাবে মাটি থেকে তৈরি হয়েছিল, আবার মাটিতেই মিশে যায়—এই চিরন্তন সত্য যেন শিল্পীর ক্যামেরায় নতুন রূপ পেয়েছে।

এছাড়াও, প্রদর্শনীতে “দ্য ওয়াচম্যান” নামে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে, যেখানে সাইপ্রাস এবং তুরস্কের মধ্যে সীমান্তের একজন সৈনিকের মানসিক অবস্থা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সৈনিকের একাকীত্ব এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা শিল্পীর গভীর উপলব্ধির প্রমাণ। সৈনিকের মাথার আকারের কিছু ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে যুদ্ধের বিভীষিকা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

প্রদর্শনীতে বিভিন্ন দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত স্মৃতিস্তম্ভের ছবিও স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ব্রিস্টলের এডওয়ার্ড কোলস্টনের মূর্তি ভাঙার ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

আলী চেরি তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে ইতিহাসকে নতুনভাবে দেখার এবং নিজেদের ভাষ্য তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

আলী চেরির এই প্রদর্শনী দর্শকদের যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, সাংস্কৃতিক অবক্ষয় এবং মানুষের টিকে থাকার অদম্য ইচ্ছার প্রতিচ্ছবি দেখায়।

প্রদর্শনীটি আগামী ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *