মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি আবাসন ভাউচার (EHV) কর্মসূচির ভবিষ্যৎ এখন গভীর অনিশ্চয়তার মুখে। এই কর্মসূচির আওতায় থাকা প্রায় ৬০ হাজার পরিবার এবং ব্যক্তির জন্য, যারা গৃহহীনতা অথবা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন, তাদের জীবনে নেমে আসতে পারে চরম দুর্ভোগ।
যদি মার্কিন কংগ্রেস এই বিষয়ে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে তাদের অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
২০২১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় ‘আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান অ্যাক্ট’-এর অংশ হিসেবে এই EHV প্রোগ্রাম চালু করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল গৃহহীনতা, পারিবারিক সহিংসতা ও মানব পাচার থেকে রক্ষা পাওয়া মানুষদের সহায়তা করা।
এর জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রকল্পের আওতায় সান ফ্রান্সিসকো থেকে শুরু করে ডালাস, এমনকি ফ্লোরিডার টল্লাহাসি পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষজন উপকৃত হয়েছেন।
এদের মধ্যে ছিলেন শিশু, প্রবীণ এবং যুদ্ধফেরত সেনারাও। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, এই তহবিল দশকের শেষ পর্যন্ত চলবে।
কিন্তু দ্রুত বাড়তে থাকা ভাড়ার কারণে সেই হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের হাউজিং অ্যান্ড আর্বান ডেভেলপমেন্ট বিভাগ (HUD) তাদের তহবিল বিতরণের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, তারা যেন ধরে নেয় তাদের জন্য আর কোনো অতিরিক্ত তহবিল আসছে না।
এই পরিস্থিতিতে, প্রোগ্রামটির ভবিষ্যৎ এখন মার্কিন কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।
কংগ্রেস চাইলে ফেডারেল বাজেট তৈরির সময় এই খাতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করতে পারে। তবে, এমন একটি সময়ে যখন রিপাবলিকানরা সরকারি ব্যয় হ্রাসের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন, তখন এই কাজটি বেশ কঠিন হতে পারে।
ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান ম্যাক্সিন ওয়াটার্স, যিনি চার বছর আগে এই প্রোগ্রামটির পক্ষে জোরালো সমর্থন জুগিয়েছিলেন, তিনি আরও ৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করছেন।
কিন্তু যারা এই প্রোগ্রামটি টিকিয়ে রাখার জন্য ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, তারা খুব একটা আশাবাদী নন।
বাজেট বিষয়ক আলোচনা তদারককারী চারজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ‘ন্যাশনাল লো ইনকাম হাউজিং কোয়ালিশন’-এর পাবলিক পলিসি ম্যানেজার কিম জনসন জানিয়েছেন, তাদের লড়াইটা কঠিন হতে চলেছে।
এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের একজন হলেন ড্যানিরিস এস্পিনাল।
তিনি এবং তার দুই মেয়ে, যাদের বয়স যথাক্রমে ৪ ও ১৯, একটি তিন বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন।
এই অ্যাপার্টমেন্টের মাসিক ভাড়া ৩,০০০ ডলারের বেশি, যা ভাউচার ছাড়া তাদের পক্ষে পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব।
ড্যানিরিস কয়েক বছর আগে একটি সহিংস সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তার প্রাক্তন স্বামী তাকে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা থেকে শুরু করে কেনাকাটার মতো সাধারণ কাজগুলো করতেও বাধা দিতেন।
২০২১ সালের মার্চ মাসে, যখন প্রায় ১২,০০০ ডলার বকেয়া ভাড়ার নোটিশ আসে, তখন তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন।
একদিকে স্বামীর প্ররোচনায় তিনি চাকরি ছেড়েছিলেন, অন্যদিকে তিনিই পরিবারের সব খরচ চালাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।
অবশেষে, স্বামীর নির্যাতনের প্রমাণস্বরূপ পুলিশের রিপোর্ট এবং আদালতের রায়ে ড্যানিরিসের হাতে মেয়ের অভিভাবকত্ব আসে।
কিন্তু ভবিষ্যৎ তখনও অনিশ্চিত ছিল: তিনি একা ছিলেন, হাজার হাজার ডলার ঋণ ছিল এবং নতুন জন্ম নেওয়া শিশু ও কিশোরী মেয়ের ভরণপোষণের কোনো উপায় ছিল না।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কার উচ্ছেদ প্রতিরোধ বিষয়ক আর্থিক সহায়তা ড্যানিরিসকে সেই সংকট থেকে বাঁচিয়েছিল, বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করতে এবং পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছিল।
এরপরই আসে EHV প্রোগ্রাম, যা ড্যানিরিসের মতো পরিস্থিতিতে থাকা মানুষদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
নিউইয়র্ক সিটিতে পারিবারিক গৃহহীনতার প্রধান কারণ হলো পারিবারিক সহিংসতা, এমনটাই জানিয়েছেন নিউ ডেস্টিনি হাউজিংয়ের আবাসন সহায়তা বিভাগের পরিচালক জিনা ক্যাপুচিটি।
এই সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ৭০০ জন সহিংসতার শিকার হওয়া নারী এই ভাউচার প্রোগ্রামের সুবিধা পেয়েছেন।
ড্যানিরিস তাদেরই একজন, যিনি ২০২৩ সালে ব্রুকলিনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন।
ড্যানিরিস জানান, একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাওয়ার চেয়েও বড় ছিল নিজের আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়া।
তিনি বলেন, “আমি আমার আত্ম-সম্মান ফিরে পেয়েছি, শান্তি পেয়েছি এবং নিজের পরিচয় নতুন করে তৈরি করতে পেরেছি।” বর্তমানে তিনি ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ জমা করছেন, কারণ তার সবচেয়ে বড় ভয় হলো, এত কষ্ট করে যা অর্জন করেছেন, তা হারানোর সম্ভবনা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস