যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা টার্গেট-এর (Target) ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিষয়ক নীতিমালায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তের জেরে দেশটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ব্যাপক ক্রেতা বিক্ষোভ, যার ফলস্বরূপ দোকানে আসা গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
জানুয়ারির শেষে টার্গেট কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা তাদের DEI বিষয়ক কিছু কর্মসূচি সীমিত করতে যাচ্ছে। এই ঘোষণার পরেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান গ্রাহকেরা। তাদের মতে, যে কোম্পানি এত দিন ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির কথা ফলাও করে প্রচার করেছে, তারাই কিনা এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত দশ সপ্তাহ ধরে টার্গেট-এর দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা কমতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে আগের বছরের তুলনায় এই হার ছিল ৯ শতাংশ, আর মার্চে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৫ শতাংশে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ছুটির দিনের কেনাকাটার প্রভাবের পাশাপাশি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী ‘টার্গেট ফাস্ট’ নামে একটি ক্রেতা-বর্জন কর্মসূচি।
আটলান্টার কাছে নিউ বার্থ মিশনারি ব্যাপটিস্ট চার্চের সিনিয়র পাSTOR জামাল ব্রায়ান্ট এই বর্জন কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি লেন্ট (৫ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল) চলাকালীন সময়ে এই দোকানে কেনাকাটা বন্ধ রাখার ডাক দেন। জামাল ব্রায়ান্টের মতে, এই বর্জন কর্মসূচিতে দুই লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন।
বিভিন্ন মহলের চাপ মোকাবেলা করতে গিয়ে বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে টার্গেট। একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চাচ্ছে, তারা যেন DEI বিষয়ক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, অন্যদিকে গ্রাহকদের প্রত্যাশা ভিন্ন।
তারা আমার কথা শুনছে। ক্যাশ কাউন্টার আমার কথা শুনছে। দাবি না জানালে ক্ষমতাধররা কিছু দেয় না।”
বিশেষ করে টার্গেটের মতো কোম্পানিগুলোর ওপর চাপটা বেশি, কারণ তারা আগে কর্মী নিয়োগ ও পণ্য সংগ্রহে বৈচিত্র্যের ওপর জোর দিত।
জানা গেছে, ব্রায়ান্টের সঙ্গে বৈঠকের পর টার্গেট কর্তৃপক্ষ তাদের পুরনো একটি প্রতিশ্রুতির কথা রাখতে রাজি হয়েছে। তারা কৃষ্ণাঙ্গ-মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করার যে অঙ্গীকার করেছিল, সেটি তারা বহাল রাখবে।
তবে ব্রায়ান্টের মতে, এতে সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি এই বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আগামী মঙ্গলবার একটি টাউন হলে টার্গেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান কর্নেল-কে সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে টার্গেট কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
টার্গেটের জন্য পরিস্থিতি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৬ সাল নাগাদ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে, যা বর্তমানে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
আমরা তাদের (টার্গেট) বন্ধু হিসেবে দেখেছিলাম। তারা বৈচিত্র্যের পক্ষে ছিল। তাই, তাদের এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতবাক হয়েছি।”
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই টার্গেট সংখ্যালঘু কর্মীদের জন্য কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য বাতিল করে এবং বর্ণগত বিচার বিষয়ক একটি নির্বাহী কমিটিও বিলুপ্ত করে দেয়। একইসঙ্গে, তারা তাদের DEI বিষয়ক কিছু কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আনে।
যদিও টার্গেট জানায়, তারা ‘বিলােঙ্গিং অ্যাট দ্য বুলseye’ নামে নতুন একটি কৌশল নিয়েছে এবং তারা তাদের কর্মী, অতিথি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘একতাবোধ’ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া, তারা ‘পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার’ ওপর জোর দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টার্গেটের এই সিদ্ধান্ত তাদের ব্যবসার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
বর্জন কর্মসূচির কারণে ছোট ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্রায়ান্ট ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন সরাসরি কৃষ্ণাঙ্গ-মালিকানাধীন ব্যবসা থেকে পণ্য কেনেন এবং টার্গেটের শেয়ার বিক্রি করে দেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে টার্গেট জানায়, তারা কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু-মালিকানাধীন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য বিক্রি অব্যাহত রাখবে। তবে দোকানে কেনাকাটা কমে যাওয়ায় এইসব ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: CNN