সিনেমা: শ্বেতাঙ্গদের বিভীষিকা আর কৃষ্ণাঙ্গদের বেঁচে থাকার গল্প নিয়ে রায়ান কুগলারের নতুন ছবি।
রায়ান কুগলার, যিনি ‘ফ্রুটভ্যাল স্টেশন’, ‘ক্রিড’ এবং ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর মতো ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবন এবং অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন, এবার নিয়ে এসেছেন নতুন সিনেমা ‘সিনার্স’। এই ছবিতে তিনি আমেরিকার এক কঠিন সময়ের গল্প বলেছেন, যেখানে শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গদের টিকে থাকার সংগ্রাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সিনেমাটি তৈরি হয়েছে জিম ক্রোর সময়ে, যখন শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বিভেদ ছিল চরম পর্যায়ে।
সিনেমার গল্পটি শুরু হয় সামি নামের এক তরুণের জীবন দিয়ে, যে গিটার বাজানোকে ভালোবাসে এবং চার্চের গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায়। তার দুই চাচাতো ভাই শিকাগো থেকে ফিরে এসে তাদের শহর ক্লার্কসভিলে একটি জুক জয়েন্ট (juk joint) খোলে।
জুক জয়েন্ট হলো এমন এক জায়গা, যেখানে গান-বাজনা, নাচ এবং আনন্দের মধ্যে মানুষ তাদের দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়। কিন্তু তাদের এই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
কুগলার এই ছবিতে শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের রূপক হিসেবে ভ্যাম্পায়ারদের ব্যবহার করেছেন। তারা যেন শোষক, যারা কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন কেড়ে নিতে চায়।
সিনেমার গল্পে দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের সংস্কৃতি আর ভালোবাসার মাধ্যমে কীভাবে সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।
সিনেমাটিতে ‘গ্রেট মাইগ্রেশন’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ ভালো জীবনের আশায় দক্ষিণ থেকে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, সেখানে হয়তো তারা শ্বেতাঙ্গদের থেকে মুক্তি পাবে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি।
তারা সেখানেও বর্ণবাদের শিকার হয়। কুগলার দেখিয়েছেন, কীভাবে কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের স্বপ্নভঙ্গ এবং হতাশার মধ্যেও নিজেদের জন্য আনন্দ খুঁজে নেয়।
সিনেমাটিতে ক্লার্কসভিলে জুক জয়েন্টের গ্র্যান্ড ওপেনিংয়ের দৃশ্যটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই পার্টিতে অতীতের কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মানুষের যোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে।
এই দৃশ্যটি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের কঠিন সময়েও আনন্দ খুঁজে নেওয়ার মানসিকতাকে তুলে ধরে।
সিনেমার শেষে, সামি যখন জুক জয়েন্টের রাতের কথা মনে করে, তখন সে বলে, সেটি ছিল তার জীবনের সেরা রাত, আবার সবচেয়ে খারাপও। কুগলার যেন সিনেমার মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবনের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আনন্দ-বেদনা, সবকিছুকে এক সুতোয় গেঁথেছেন।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, ‘সিনার্স’ শুধু একটি হরর ফিল্ম নয়, এটি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবনের গভীর এবং বাস্তব চিত্র।
রায়ান কুগলার এই ছবিতে দেখিয়েছেন, কীভাবে তারা সমাজের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভালোবাসার মাধ্যমে টিকে থাকে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান