পোপ ফ্রান্সিসের निधन: এরপর কী হবে? বিস্তারিত দেখুন!

পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণ: বিশ্ব হারালো এক মহান ধর্মগুরু।

আন্তর্জাতিক ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান, পোপ ফ্রান্সিস, ৮৮ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন। ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে ভ্যাটিকান সিটি থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা।

পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম আর্জেন্টিনায়, ১৯৩৬ সালের ১৭ই ডিসেম্বর। তাঁর আসল নাম ছিল হোর্হে মারিও বের্গোলো। পরে তিনি সেন্ট ফ্রান্সিস অফ অ্যাসিজির প্রতি সম্মান জানিয়ে ফ্রান্সিস নাম গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ তিনি পোপ নির্বাচিত হন, যাঁর মাধ্যমে বিশ্বের ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিক খ্রিস্টানের নেতৃত্ব তাঁর হাতে আসে।

পোপ ফ্রান্সিস তাঁর আগেকার পোপদের থেকে ভিন্ন পথে হেঁটেছেন। তিনি ভ্যাটিকানের স্বচ্ছতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন এবং সাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন আন্তঃধর্মীয় সংলাপেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

পোপ ফ্রান্সিস সবসময়ই দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। বিশেষ করে গাজা উপত্যকার মানবিক সংকট নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২০২৪ সালের ক্রিসমাসের ভাষণে তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং সেখানকার মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহের কথা বলেন। মৃত্যুর আগের দিন ইস্টার সানডেতেও তিনি একই বার্তা দেন।

পোপ ফ্রান্সিস স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এবং হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।

পোপের মৃত্যুর পর শোকের একটি বিশেষ সময় শুরু হয়, যা ‘নোভেনডিয়ালে’ নামে পরিচিত। এই সময়ে তাঁর মরদেহ জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় রাখা হবে। এরপর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।

সাধারণত, পোপের মৃত্যুর পর তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে কার্ডিনাল কলেজের ডিন প্রধান ভূমিকা পালন করেন। পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রায় চার মিলিয়ন মানুষ অংশ নিয়েছিল, যেখানে বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সময়টিকে ‘সিদে ভ্যাকান্তে’ (Sede Vacante) বা শূন্যাসন হিসেবে ধরা হয়। নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেন। এই ভোট গ্রহণের স্থানটি হলো সিস্টিন চ্যাপেল। সাধারণত, নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য দিনে সর্বোচ্চ চারটি ভোট হয়। যদি কোনো প্রার্থী দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হন, তবে কালো ধোঁয়া নির্গত করা হয়। নতুন পোপ নির্বাচিত হলে, সাদা ধোঁয়া দিয়ে তা ঘোষণা করা হয়।

পোপ ফ্রান্সিস তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কাঠের তৈরি একটি সাধারণ কফিনে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর শোকের এই সময়ে বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা সভা ও শোকানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *