পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন। তিনি শুধু ধর্মগুরুই নন, পরিবর্তনের এক অগ্রদূতও বটে।
বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে, কিভাবে তিনি চার্চের পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন পথে হেঁটেছেন, সেই বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আলোচনা।
২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সংস্কারের দিকে নজর দেন। তিনি উপলব্ধি করেন, আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে চার্চের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা জরুরি।
পুরনো ধ্যান-ধারণা এবং কট্টরপন্থার পরিবর্তে, তিনি উদারতা এবং অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেন। এর ফলস্বরূপ, ভ্যাটিকানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারীদের নিয়োগ করা হয়।
শুধু তাই নয়, তিনি সমকামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার বার্তা দেন এবং তাদের প্রতি বিচারকের আসনে বসতে অস্বীকার করেন। তার এই পদক্ষেপগুলো রক্ষণশীলদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা তৈরি করলেও, তিনি একই লিঙ্গের মানুষের মধ্যে হওয়া নাগরিক সম্পর্ককে সমর্থন করেন।
পোপ ফ্রান্সিস বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া এবং দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ক্যাথলিকদের প্রতিও সহানুভূতি দেখিয়েছেন। তিনি ধর্মযাজকদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন এই ধরনের মানুষদের প্রতি সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা দেখান, তাদের একঘরে না করে বরং তাদের পাশে দাঁড়ান।
তিনি মনে করেন, সমাজের এই অংশের মানুষের প্রতি কঠোর নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, বরং তাদের বোঝা উচিত এবং তাদের পাশে থাকা উচিত।
শুধু মানুষের প্রতিই নয়, প্রকৃতির প্রতিও পোপ ফ্রান্সিসের গভীর ভালোবাসা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি ক্যাথলিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, পরিবেশ ধ্বংস করা ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি অবমাননা। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও পোপ ফ্রান্সিসের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
যদিও তিনি কম্পিউটারকে “ডাইনোসর” বলে উল্লেখ করতেন, তবুও তিনি ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করেন এবং অনলাইনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর মাধ্যমে তিনি সারা বিশ্বের ক্যাথলিকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন।
পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো ক্যাথলিক চার্চে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। তার উদার দৃষ্টিভঙ্গি, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি এবং পরিবেশ রক্ষার আহ্বান তাকে বিশ্বজুড়ে সম্মানিত করেছে।
তিনি দেখিয়েছেন, ধর্মকে কিভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংস্কার করা যায়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক