পোপের মৃত্যুর পর কী ঘটে? ভ্যাটিকানের উত্তরাধিকার প্রক্রিয়া: একটি পর্যালোচনা
ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপের মৃত্যু হলে, তা শুধু একটি ধর্মীয় ঘটনা নয়, বিশ্বজুড়ে এর তাৎপর্য অনেক।
পোপের মৃত্যুর পর শুরু হয় বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা, যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সম্প্রতি প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক পোপের মৃত্যুর পর কী ঘটে।
যদি কোনো পোপের মৃত্যু হয়, তাহলে তাঁর প্রধান সহযোগী বা কর্মসচিব (carmelengo) প্রথমে পোপের আসল নাম ধরে তিনবার ডাকেন। যদি কোনো সাড়া না পাওয়া যায়, তবে মৃত্যুর সনদ তৈরি করা হয় এবং রোমের কার্ডিনালকে জানানো হয়।
ঐতিহ্য অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর পর তাঁর কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ‘ফিশারম্যানের আংটি’ ভেঙে ফেলা হয়। এরপর তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবন সিল করে দেওয়া হয়।
ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের কাছে পোপের মৃত্যুর খবর জানানোর আগে, কর্মসচিব কার্ডিনালদের এই বিষয়ে অবহিত করেন। এরপর শুরু হয় শোকের নয় দিনের প্রক্রিয়া, যা ‘নোভেনডিয়াল’ নামে পরিচিত।
এই সময়ে প্রয়াত পোপের মরদেহ সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় রাখা হয়, যেখানে সাধারণ মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।
খবর অনুযায়ী, পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠান তাঁর মৃত্যুর চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই স্থানেই তা সম্পন্ন হবে।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে কিছু নতুন রীতি তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল, সাধারণ কফিনে তাঁর মরদেহ রাখা এবং ঐতিহ্যবাহী তিনটি কফিন ব্যবহারের পরিবর্তে একটি কফিন ব্যবহার করা।
তিনি নিজে ভ্যাটিকানের পরিবর্তে ইতালির রাজধানী রোমের সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে ব্যাসিলিকায় সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া একটি উন্মুক্ত অনুষ্ঠান, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
পোপ দ্বিতীয় জন পলের শেষকৃত্যে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কার্ডিনালরা নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য মিলিত হন। এই প্রক্রিয়া ‘কনক্লেভ’ নামে পরিচিত।
কনক্লেভের সময় কার্ডিনালরা সিস্টিন চ্যাপেলে একত্রিত হন এবং নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য গোপন ভোট দেন। এই ভোটে অংশ নিতে পারেন কেবল ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা।
নতুন পোপ নির্বাচিত হতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়।
পোপ নির্বাচনের সময় সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনির ওপর সাদা ধোঁয়া উঠলে বোঝা যায় নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। আর কালো ধোঁয়া উঠলে, নির্বাচন প্রক্রিয়া তখনও চলছে।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক কার্ডিনাল নিয়োগ করেছেন। ফলে, তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন পোপ নির্বাচনে পবিত্র আত্মার ইচ্ছাই প্রধান, তবে কে নির্বাচিত হবেন, তা বলা কঠিন।
তথ্য সূত্র: পিপলস