বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা এক ঐতিহ্য। পোপের মৃত্যুর পর অথবা পদত্যাগের কারণে নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের নিয়ে যে গোপন বৈঠক হয়, তাকে ‘কনক্লেভ’ বলা হয়।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
পোপ নির্বাচনের ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টান ধর্মমতে, যিশু খ্রিস্ট সেন্ট পিটারকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
সেই সেন্ট পিটার ছিলেন প্রথম পোপ। এরপর থেকে পোপের পদটি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে।
একাদশ শতকের আগে পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে পোপ নির্বাচিত হতেন। কিন্তু এতে প্রায়ই বিভেদ দেখা দিত।
পরবর্তীতে পোপ দ্বিতীয় নিকোলাস ১০৫৯ সালে একটি ডিক্রি জারি করেন, যেখানে কার্ডিনাল বিশপদের পোপ নির্বাচনের ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এই ডিক্রি পোপ নির্বাচনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বর্তমানে, পোপ নির্বাচনের মূল দায়িত্ব পালন করেন কার্ডিনালরা। এই কার্ডিনালদের সবাইকেই কনক্লেভে অংশ নিতে হয়, যদি না তারা গুরুতর অসুস্থ হন বা তাদের বয়স ৮০ বছরের বেশি হয়।
সাধারণত, পোপের মৃত্যুর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কনক্লেভ শুরু হয়। এই সময়ের মধ্যে কার্ডিনালরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসে রোমে একত্রিত হন।
কনক্লেভের সময়, কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে মিলিত হন। নির্বাচনের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বাইরের কারও সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এমনকি, চ্যাপেলের বাইরে থাকা কর্মীদেরও কার্ডিনালদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার অনুমতি থাকে না। ব্যালট পেপার প্রস্তুত করা হয়, এবং গোপন ভোটের মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচন করা হয়।
ভোট গ্রহণের পর, ব্যালটগুলি গণনা করা হয় এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যদি কোনো প্রার্থী দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তাহলে ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হয়।
এই প্রক্রিয়া কয়েক দিন ধরে চলতে পারে। এমনকি, কোনো ফল না হলে কয়েক দফা আলোচনারও ব্যবস্থা থাকে।
নতুন পোপ নির্বাচনের পর, সবার জন্য আনন্দের মুহূর্ত আসে যখন সিস্টিন চ্যাপেল থেকে সাদা ধোঁয়া বের হয়।
এই ধোঁয়াই ঘোষণা করে যে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যালট পোড়ানোর সময় বিশেষ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে সাদা বা কালো ধোঁয়া তৈরি করা হয়।
সাদা ধোঁয়া নতুন পোপ নির্বাচনের ইঙ্গিত দেয়, আর কালো ধোঁয়া বোঝায় নির্বাচন এখনো হয়নি।
২০১৩ সালে, পোপ ফ্রান্সিসের নির্বাচনের সময় সাদা ধোঁয়ার আগে একটি সাদা গাঙচিল সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনির উপরে বসেছিল।
অনেকের মতে, এটি ছিল একটি শুভ লক্ষণ, যা দ্রুত নতুন পোপ নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছিল।
পোপ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াটি ক্যাথলিক চার্চের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ।
নেতৃত্ব পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আগ্রহের বিষয়।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক