ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়ার ‘যুদ্ধবিরতি’ এবং ট্রাম্পের ভূমিকা
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রাশিয়ার পক্ষ থেকে ৩০ ঘণ্টার একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রভাবিত করা এবং শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে দায়ী করা।
যদিও এই যুদ্ধবিরতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, তবে এর পেছনে কিছু গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকানো ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার এক আকস্মিক ঘোষণায় এই যুদ্ধবিরতির কথা জানান। যদিও ইউক্রেন এবং আন্তর্জাতিক মহলে অনেকেই এই পদক্ষেপকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।
তাঁদের মতে, এটি ছিল মস্কোর একটি কৌশল, যা যুদ্ধের দায় থেকে নিজেদের আড়াল করতে এবং শান্তির পথে বাধা হিসেবে ইউক্রেনকে তুলে ধরতে সহায়তা করবে।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে সীমান্তে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি হামলার অভিযোগ করেছে।
অন্যদিকে, রুশ কর্মকর্তারাও প্রায় ৫ হাজার ইউক্রেনীয় লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন।
এই পরিস্থিতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প ইতিপূর্বে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
তবে রাশিয়ার এই যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, সেদিকে তাকিয়ে ছিল আন্তর্জাতিক মহল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার মূল লক্ষ্য ছিল ট্রাম্পকে বোঝানো যে, তাঁর শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যর্থতার জন্য রাশিয়া নয়, বরং ইউক্রেনই দায়ী। এর মাধ্যমে তাঁরা সম্ভবত চাইছিলেন, ট্রাম্প যেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস অতীতে বেশ কয়েকবার রাশিয়ার বক্তব্য সমর্থন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে, মস্কো উদ্বিগ্ন যে, যদি ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে তাঁর সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
কারণ, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে আরও বেশি সহায়তা করতে পারে এবং রাশিয়ার ওপর নতুন করে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
তবে, ট্রাম্প এখনও পর্যন্ত ইউক্রেন নিয়ে তাঁর আগ্রহ ধরে রেখেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশা প্রকাশ করেছেন যে, রাশিয়া ও ইউক্রেন দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে এবং এর ফলে উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা একটি “পূর্ণাঙ্গ এবং ব্যাপক যুদ্ধবিরতি” অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই কৌশল সম্ভবত ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার একটি চেষ্টা ছিল, যাতে তিনি ইউক্রেনের পরিবর্তে রাশিয়ার পক্ষ নেন।
এই ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রভাবও অনেক। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে।
সুতরাং, এই যুদ্ধ এবং এর সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক সমীকরণগুলো বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন