যুদ্ধ: ‘ওয়ারফেয়ার’ ছবিতে কেন ইরাকের গল্পটা অসম্পূর্ণ?

যুদ্ধ এবং ধ্বংসের এক ভয়াবহ চিত্র: ‘ওয়ারফেয়ার’ সিনেমায় ইরাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট।

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়ারফেয়ার’ সিনেমাটি ২০০৬ সালের ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে নির্মিত হয়েছে। পরিচালক অ্যালেক্স গারল্যান্ড এই সিনেমায় যুদ্ধের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, যেখানে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশেষ একটি দলের (Navy SEALs) রামাদি শহরে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, সিনেমাটিতে যুদ্ধের কিছু দিক তুলে ধরা হলেও, এর গভীরতা এবং প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।

সিনেমায় যুদ্ধের দৃশ্যগুলো অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শহরটিতে সৈন্যদের জীবন, আত্মগোপন করে থাকা বিদ্রোহী এবং রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমা—এসবের মাধ্যমে যুদ্ধের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।

যুদ্ধের ভয়াবহতা, আহত সৈন্যদের প্রতি সহমর্মিতা এবং যুদ্ধের মানসিক প্রভাব—এগুলো সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেখা যায়। তবে, সমালোচকদের মতে, এই বাস্তবতার আড়ালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত।

পর্যালোচকরা মনে করেন, সিনেমাটিতে ইরাক যুদ্ধের মূল প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরা হয়নি। যুদ্ধের কারণ, সৈন্যদের উদ্দেশ্য, এবং ইরাকি জনগণের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি—এসব বিষয়গুলো স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধের কারণ হিসেবে কেবল কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখানো হয়েছে, যা দর্শকদের কাছে যুদ্ধের গভীরতা উপলব্ধি করতে বাধা দেয়। ইরাকিদের চরিত্রগুলো হয় দুর্বলভাবে চিত্রিত হয়েছে, অথবা তাদের একেবারেই দেখা যায়নি।

ফলে, যুদ্ধটা যেন শুধু আমেরিকান সৈন্যদের অভিজ্ঞতা, যা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়।

পর্যালোচনার মূল বিষয় হল, যুদ্ধের এই ধরনের চিত্রায়ন যুদ্ধের আসল অর্থকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে না। যুদ্ধের একটি ব্যাপক প্রেক্ষাপট রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক অনেক বিষয় জড়িত থাকে।

শুধু সৈন্যদের কষ্ট দেখালে যুদ্ধের সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে ওঠে না। যুদ্ধের এই দিকগুলো তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় সিনেমাটি তার গভীরতা হারিয়েছে।

সমালোচকরা মনে করেন, যুদ্ধ সব সময়ই ধ্বংসাত্মক। তাই যুদ্ধের সিনেমা বানানোর সময় এর পেছনের কারণ, মানুষের কষ্ট এবং যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো তুলে ধরা জরুরি। ‘ওয়ারফেয়ার’ সিনেমাটি যুদ্ধের কিছু দিক তুলে ধরলেও, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকার কারণে এটি দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *