সিরিয়ার মাটিতে এখনও যুদ্ধের বিভীষিকা, মাইন-বিস্ফোরণে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের পরও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মাইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য এখনো মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। যুদ্ধের অবসান হলেও, সেখানকার মানুষ যেন মুক্তি পাচ্ছে না মরণফাঁদ থেকে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মাঝে লুকিয়ে থাকা এসব মাইন প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ।
সম্প্রতি ঘটা একটি ঘটনার কথা জানা যায়। চার মাস আগে, সুলাইমান খলিল নামের ২১ বছর বয়সী এক যুবক তার দুই বন্ধুর সঙ্গে জলপাইয়ের বাগান পরিষ্কার করতে গিয়েছিলেন।
তারা হয়তো ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে, তাদের পায়ের নিচে এখনো ওঁত পেতে আছে মৃত্যুর দূত। হঠাৎ করেই তাদের চোখে পড়ে একটি মাইন।
ভয়ে তারা পালাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে যায় বিস্ফোরণ। মারাত্মক আহত হন সুলাইমান।
প্রথম বিস্ফোরণে তার বাম পা গুরুতর জখম হয় এবং দ্বিতীয় বিস্ফোরণে হাঁটু থেকে তার ডান পা উড়ে যায়। জীবন বাঁচাতে তিনি নিজের শার্ট ছিঁড়ে পায়ের ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন।
সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন তিনি। পরে এক সেনা সদস্যের তৎপরতায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইনসো’র তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের ৮ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত মাইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য-সংক্রান্ত ঘটনায় অন্তত ২৪৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬০ জন শিশুও রয়েছে।
আহত হয়েছেন আরও ৩৭৯ জন। এই মাইনগুলো শুধু যে মানুষ মারছে তা নয়, বরং এর কারণে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি মানসিক আঘাত, বাস্তুচ্যুতি, সম্পদ হারানো এবং জরুরি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে একসময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে, যেমন- ইদলিব প্রদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো কয়েক হাজার মাইন পুঁতে রাখা আছে।
সিরিয়ার নতুন সরকারকে দ্রুত জাতিসংঘ মাইন অ্যাকশন সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মাইন অপসারণের কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। সংস্থাটি মনে করে, দ্রুত এই কাজটি করা না হলে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা