যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সার বিষয়ক নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রোগের কারণে মৃত্যুর হার কমে আসলেও নারীদের মধ্যে রোগ শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই প্রবণতা এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ক্যান্সার বিষয়ক বিভিন্ন দিক নিয়ে নতুন করে আলোকপাত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সার শনাক্তের হার ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কমতে দেখা যায়, এরপর তা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়।
তবে নারীদের ক্ষেত্রে ২০০৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ায় ক্যান্সার শনাক্তের হার কমে গিয়েছিল। কারণ, এসময় অনেক মানুষই স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে দূরে ছিলেন।
এর ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে হয়তো অনেক ক্যান্সার দেরিতে শনাক্ত হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং উন্নত চিকিৎসার কারণে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার কমেছে।
যেমন, ধূমপান কমে যাওয়ায় ফুসফুস, মূত্রাশয় ও কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের প্রকোপ কমেছে। তবে কিছু ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, যার সঙ্গে অতিরিক্ত ওজন, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন জড়িত।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্যানক্রিয়াস, কিডনি, জরায়ু, স্তন ও লিভার ক্যান্সার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অল্পবয়সী নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অল্পবয়সী নারীদের ক্যান্সার শনাক্তের সম্ভাবনা পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
এছাড়া, জাতিগতভাবেও ক্যান্সার বিষয়ক বৈষম্য এখনো বিদ্যমান। শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের স্তন ক্যান্সার এবং জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
এর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুযোগের অভাব এবং জীবনযাত্রার ধরনের ভিন্নতাকে দায়ী করা হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা জরুরি। ধূমপান ত্যাগ করা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, ফল ও সবজি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, অ্যালকোহল পরিহার করা এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করা—এসব পদক্ষেপ ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে পারে।
এছাড়াও, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব, যা চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্তন ক্যান্সার, কোলন ও রেক্টাল ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণা বাংলাদেশের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে, তাই সচেতনতা বাড়ানো এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণা, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: সিএনএন