ব্রিটিশ চলচ্চিত্র “স্ক্যাম” (Scum), যা ব্রিটেনের একটি কিশোর সংশোধন কেন্দ্রের নিষ্ঠুর চিত্র তুলে ধরেছিল, সেই ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেতা রে উইনস্টোন। এই সিনেমাটি তৈরি হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, যা সেই সময়ের ব্রিটিশ সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
বাস্তবতার কাছাকাছি দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার কারণে সিনেমাটি আজও দর্শকদের মনে দাগ কাটে।
রে উইনস্টোন জানান, কীভাবে তিনি এই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন।
তিনি জানান, শুরুতে এই চরিত্রে একজন স্কটিশ অভিনেতাকে নির্বাচন করার কথা ছিল, তবে তার হাঁটার ধরন দেখে পরিচালক অ্যালান ক্লার্ক মুগ্ধ হন। উইনস্টোন বলেন, “আমি ১১ বছর বয়স থেকেই বক্সিং করি, আর সেই কারণে আমার মধ্যে একটা বিশেষ ধরনের হাঁটাচলার ভঙ্গি তৈরি হয়েছিল, যা সম্ভবত পরিচালকের ভালো লেগেছিল।”
“স্ক্যাম”-এর গল্প গড়ে উঠেছে একটি বোরস্টালে (borstal)। বোরস্টাল হলো কিশোর অপরাধীদের সংশোধনাগার। উইনস্টোন আরও জানান, পরিচালক অ্যালান ক্লার্ক ও চিত্রনাট্যকার রয় মিন্টন এই সিনেমার মাধ্যমে তরুণ সমাজের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।
সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে বাস্তবতার ছোঁয়া ছিল, যা দর্শকদের নাড়িয়ে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, মারামারির দৃশ্যগুলো খুবই দ্রুত ঘটত, কারণ বাস্তব জীবনেও মারামারি এমনই হয়।
সিনেমার প্রথম সংস্করণটি বিবিসি-তে সম্প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা নিষিদ্ধ করা হয়।
উইনস্টোন জানান, এই ঘটনার পর তিনি অভিনয় থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। পরে, যখন সিনেমাটি আবার বড় পর্দায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন তিনি এতে অভিনয়ের জন্য রাজি হন।
সিনেমার দ্বিতীয় সংস্করণে, কয়েকটি চরিত্রে নতুন অভিনেতা নেওয়া হয়েছিল, যা সিনেমাটিকে আরও সতেজতা এনে দেয়।
উইনস্টোন আরও জানান, সিনেমার শুটিংয়ের সময় অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এমনকি, অভিনেতাদের সত্যিকারের মারধরের শিকার হতে হয়েছিল, যাতে দৃশ্যগুলো আরও বাস্তব মনে হয়।
“স্ক্যাম”-এর অভিনেতা ফিল ড্যানিয়েলস-ও এই সিনেমা নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান।
তিনি বলেন সিনেমার শুটিং সেটে নানা ধরনের মজার ঘটনা ঘটত। একবার, তারা একটি বাসে করে শুটিং লোকেশনে যাচ্ছিলেন, এমন সময় বাসের ড্রাইভার চাবি লাগিয়ে বাস থেকে নেমে যান। সুযোগ বুঝে এক অভিনেতা বাসটি নিয়ে পালিয়ে যান এবং কয়েকজন মানসিক রোগীকে তুলে নেন।
ড্যানিয়েলস আরও জানান, একটি দৃশ্যে তাকে একটি মোজা ভর্তি বিলিয়ার্ডের বল দিয়ে মারা হয়েছিল। দৃশ্যটি এতটাই বাস্তব ছিল যে, তার মুখে সত্যি সত্যিই আঘাত লেগেছিল।
সিনেমার শেষে হওয়া দাঙ্গার দৃশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সবাই মেঝেতে পিছলে পড়ছিলাম, কারণ সেখানে বেকড বিনস ও ম্যাশ করা আলু পড়েছিল। দৃশ্যটি দেখতে দারুণ লাগছিল, তবে আমাদের জন্য পরিস্থিতি বেশ কঠিন ছিল।”
“স্ক্যাম” সিনেমাটি সেই সময়ের ব্রিটিশ সমাজে কিশোর অপরাধ এবং কারাগারের ভেতরের কঠিন জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিল।
আজও এই সিনেমাটি সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা সৃষ্টি করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান