ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের সাবেক প্রধান রোনেন বার-এর সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বার অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু তাকে বরখাস্ত করেছেন কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্যের শপথ নিতে এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর নজরদারি চালাতে রাজি হননি।
এই ঘটনা ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর সংকট তৈরি করেছে।
বার-এর অভিযোগ, নেতানিয়াহু তাকে একাধিকবার বলেছেন, কোনো সাংবিধানিক সংকটে তিনি যেন উচ্চ আদালতের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য দেখান। এমনকি, একটি দুর্নীতি মামলার শুনানিতে নেতানিয়াহুকে প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বাঁচাতে বার-এর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
কিন্তু বার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বার আরও জানান, নেতানিয়াহু বিভিন্ন মিটিংয়ের শেষে, কোনো আনুষ্ঠানিক নথিপত্র ছাড়াই তাকে এসব কথা বলতেন।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর কার্যালয় বার-এর অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, বার-এর দেওয়া হলফনামাটি ভিত্তিহীন এবং এর জবাব দেওয়া হবে।
নেতানিয়াহু পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, বার-এর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এবং শিন বেট-এর প্রতি তার আস্থা সম্পূর্ণরূপে চলে গেছে।
তিনি বারের বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাত এবং সংস্থাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারেরও অভিযোগ এনেছেন।
এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিদের আক্রমণের পর। শিন বেট, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে, নেতানিয়াহু সরকারের কিছু নীতির সমালোচনা করে।
বার-এর নির্দেশে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কাতার থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। অভিযোগ, এই অর্থ হামাসকে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বারকে সরানোর পেছনে নেতানিয়াহুর মূল উদ্দেশ্য ছিল এই তদন্তকে দুর্বল করা।
বিরোধী দলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজনৈতিক হত্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অভিযোগ তুলেছেন।
বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, সরকার বারকে সরিয়ে দিতে চাইছে, যাতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে, শিন বেটের সাবেক প্রধান রোনেন বার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে এখনো অটল রয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার বরখাস্তের সময় যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তের সঙ্গে জড়িত ছিল।
তিনি মনে করেন, তাকে সরানোর পেছনে কোনো পেশাদার কারণ ছিল না, বরং নেতানিয়াহু চেয়েছিলেন তিনি যেন তার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে অনুগত থাকেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান