ভারতে ভ্যানস: শুল্কের চাপ এড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা!

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স চার দিনের সফরে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর নতুন করে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছে।

নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা এই শুল্ক এড়াতে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে। একইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছে ভারত।

সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভেন্সের বৈঠক হয়েছে। সরকারি সূত্রে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, নয়াদিল্লিতে মোদী তার বাসভবনে ভেন্সকে উষ্ণ আলিঙ্গন জানাচ্ছেন।

দুই নেতার মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে মোদী ও ট্রাম্পের মধ্যে হওয়া আলোচনা অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কথা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশ চলতি বছর একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আলোচনা চালাচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য ভারতের উপর ২৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে অবশ্য ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক স্থগিত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এটি ছিল ভারতের সঙ্গে একটি ভালো বাণিজ্য চুক্তি করার কৌশল।

আলোচনা অনুযায়ী, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতে এটি ভেন্সের প্রথম সফর। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে, যা এই অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বৈঠকে মোদী ও ভেন্স ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা’ এবং ‘পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন’ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভেন্সের এই সফর ‘ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করবে’।

চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে দেখে আসছে এবং তারা সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছে।

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ‘কোয়াড’ নিরাপত্তা সংলাপেও যুক্ত। এই জোটকে চীনের প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প সম্ভবত এ বছর শেষের দিকে ভারতে কোয়াড নেতাদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন।

২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মোদী তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর মোদী ছিলেন প্রথম নেতাদের মধ্যে একজন যিনি তার সঙ্গে দেখা করেন এবং আলোচনা করেন।

মোদী তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘মেগা পার্টনারশিপের’ কথা উল্লেখ করেন। দুই নেতা ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক প্রসারিত করারও পরিকল্পনা করেছেন।

ভারত মার্কিন তেল, জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বেশি পরিমাণে কেনার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়া, মোদী সরকার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা কাগজপত্রহীন অনেক ভারতীয়কে ফেরত নিতে রাজি হয়েছে।

যদিও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ছে, তবুও ট্রাম্প ভারতকে ‘শুল্কের অপব্যবহারকারী’ এবং ‘শুল্কের রাজা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *