শিরোনাম: যখন এক প্রাণী অন্য প্রাণীর “লিফট” নেয়: প্রকৃতির এক বিচিত্র খেলা
প্রকৃতিতে, অনেক সময় এমন কিছু দৃশ্য দেখা যায় যা আমাদের বিস্মিত করে তোলে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা একটি বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন যেখানে একটি হাঙরের সঙ্গে একটি অক্টোপাসকে দেখা গেছে।
নিউজিল্যান্ডের হরাকি উপসাগরে মাকো হাঙরের (Mako shark) মাথায় চেপে বসেছিল একটি অক্টোপাস! এই দৃশ্য দেখে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো অবাক।
তবে, প্রকৃতির জগতে এমন ঘটনা নতুন নয়। একটি প্রাণী যখন অন্য প্রাণীর সাহায্য নেয়, তখন তাকে বৈজ্ঞানিকভাবে ‘ফোরেসি’ (phoresy) বলা হয়।
সহজ ভাষায়, এটি হল এক ধরনের “হিটচাইকিং” বা “লিফট” নেওয়ার মতো ঘটনা, যেখানে একটি প্রাণী অন্য প্রাণীর শরীরে চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়।
ফোরেসি বিষয়টি ছোট প্রাণীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পোকামাকড় বা অন্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা সাধারণত নিজেদের স্থানান্তরের জন্য এই পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।
উদাহরণস্বরূপ, রেমোরা (Remora) নামক মাছ তিমি হাঙরের (whale shark) সঙ্গে লেগে থাকে। শামুক বা বার্নাকল (Barnacle) তিমি বা কচ্ছপের চামড়ার সাথে আটকে থাকে।
এমনকি, তেলাপোকা, পিঁপড়ের ঘাড়ে চড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। এছাড়াও, এক ধরনের ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী জোঁকের (copepod) মতো জেলিফিশের (jellyfish) ওপর আরোহণ করে।
তবে, এই ‘হিটচাইকিং’-এর মাঝে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। আশ্রয়দাতা প্রাণীটি যদি শিকারী হয়, তাহলে আরোহী প্রাণীর জীবন সংশয় হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফোরেসির কারণে একটি প্রাণী হয়তো অন্য কোনো পরিবেশে গিয়ে পড়ে, যেখানে তার survival-এর সম্ভাবনা কম থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু পরজীবী বার্নাকল তাদের আশ্রয়দাতার শরীর থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।
ফোরেসি বিষয়টি জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এর মাধ্যমে একটি প্রাণী অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে সহায়তা করে।
বিজ্ঞানীরা এখনো ফোরেসির কারণ এবং বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন। সমুদ্রের গভীরে ফোরেসির ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন, তাই এই বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানার বাকি আছে।
তবে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ফোরেসি সম্ভবত বিবর্তনের পথে পরজীবিতার দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশেও কি এমন ঘটনা ঘটে? হয়তো, আমাদের আশেপাশেও এমন অনেক প্রাণী আছে যারা এই ফোরেসির মাধ্যমে জীবন ধারণ করে।
প্রকৃতির এই খেলা সত্যিই বিস্ময়কর!
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক