২৫ বছর পর: চালের দামে অস্থিরতা, কোরিয়া থেকে চাল কিনছে জাপান!

জাপানে চালের বাজারে অস্থিরতা, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি শুরু।

গত ২৫ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ক্রমবর্ধমান দামের সঙ্গে লড়তে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চাল আমদানি করতে শুরু করেছে জাপান। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চালের দাম দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও খুব একটা সুফল আসেনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানে উৎপাদিত চালের দাম গত এক বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ফলে, ভোক্তারা এখন তুলনামূলকভাবে সস্তা বিদেশি চালের দিকে ঝুঁকছেন।

যদিও আমদানি করা চালের ওপর বেশ উচ্চ হারে শুল্ক ধার্য করা হয়, তবুও দামের কারণে চাহিদা বাড়ছে। শুরুতে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা মাত্র দুই টন চাল অনলাইন এবং সুপারমার্কেটগুলোতে বিক্রি করা হয়। তবে, খুব শীঘ্রই আরও ২০ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঐতিহ্যগতভাবে, জাপানিরা বিদেশি চালের গুণগত মান এবং স্বাদের বিষয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৩ সালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা চাল তেমন একটা বিক্রি হয়নি।

কিন্তু বর্তমান সংকটের কারণে ভোক্তাদের বিদেশি চালের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, জাপানের একটি রেস্টুরেন্ট মালিক, যিনি আগে জাপানি চাল ব্যবহার করতেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আমেরিকান চাল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জাপানের খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা তাদের বিশাল মজুদ থেকে চাল ছাড়তে শুরু করেছে।

মার্চ মাস থেকে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টন চাল ছাড়ার পরিকল্পনা করা হলেও, সরবরাহ এবং বিতরণে সমস্যার কারণে খুব সামান্য পরিমাণেই তা দোকানে পৌঁছাতে পেরেছে।

জানা গেছে, পরিবহন সংকট এবং চাল প্রস্তুত করতে বেশি সময় লাগার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর অতিরিক্ত গরমের কারণে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় জাপানের চালের মজুদে টান পড়েছে। এছাড়াও, পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের সতর্কতার কারণে মানুষজন অতিরিক্ত চাল কেনায় বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়।

সব মিলিয়ে, জাপানে চালের সংকট একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাপানের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আমাদের দেশেও চাল একটি প্রধান খাদ্যশস্য, এবং এর দামের সামান্য পরিবর্তনও সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে।

তাই, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *