সোফি কেম্পের প্রথম উপন্যাস “প্যারাডাইস লজিক” সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যা পাঠক মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে “রিয়েলিটি” নামের এক তরুণী, যে কিনা একজন খণ্ডকালীন মডেল। নিউ ইয়র্কের এক নির্জন অঞ্চলে সে তার জীবনের এক অদ্ভুত লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলে। রিয়েলিটির মূল উদ্দেশ্য হলো, তার প্রেমিক “আরিয়েল”-এর জন্য একজন “নিখুঁত বান্ধবী” হয়ে ওঠা।
আরিয়েল চরিত্রে রয়েছে মাদকাসক্ত, শিল্পী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এক যুবক। রিয়েলিটির চোখে, আরিয়েল হয়তো একজন “খারাপ ছেলে”, তবে সে তাকে ভালোবাসে। গল্পের শুরুটা বেশ সাদামাটা হলেও, ধীরে ধীরে তা গভীরতা লাভ করে।
রিয়েলিটি, “গার্লফ্রেন্ড উইকলি” নামের একটি কাল্পনিক ম্যাগাজিন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে। ম্যাগাজিনটি যেন আলো ঝলমলে হয়ে তার সামনে আসে, যা নিখুঁত বান্ধবী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ দেয়।
উপন্যাসে, রিয়েলিটি এমন এক জগতে প্রবেশ করে যেখানে সম্পর্কের ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে তার প্রেমিকের প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। গল্পের ভাষায়, “আমি অনুভব করতাম, একটি সুন্দর, মাংসল, কিন্তু খুব বড় নয় এমন পুরুষাঙ্গ দ্বারা আমার নিতম্ব ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।” এমন পরিস্থিতিতেও রিয়েলিটির মনে কোনো দ্বিধা নেই, বরং সে এই সম্পর্ককে সুন্দর মনে করে।
লেখিকা কেম্প, জর্জ সন্ডার্স এবং ওটেসা মোশফেঘের লেখার ধরণকে অনুসরণ করেছেন, যা গল্পের বিষয়বস্তুকে আরও গভীরতা দিয়েছে। গল্পের ভাষা, বর্ণনাভঙ্গি এবং অপ্রত্যাশিত মোড় পাঠককে বিস্মিত করে।
এখানে হাস্যরস এবং গভীর বেদনা একসাথে মিশে আছে। গল্পের মাঝে মাঝে সমাজের কিছু কঠিন দিক, বিশেষ করে নারী-পুরুষের সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
উপন্যাসটিতে রিয়েলিটি এবং আরিয়েলের সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজের কিছু কদর্য দিক তুলে ধরা হয়েছে। আরিয়েল সবসময় রিয়েলিটিকে অবজ্ঞা করে এবং তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে। রিয়েলিটি যেন ভালোবাসার নামে সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য।
গল্পের এই দিকটি পাঠককে নাড়া দেয়। “প্যারাডাইস লজিক” মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক গল্প, যা সম্পর্কের জটিলতা, আকাঙ্ক্ষা এবং সমাজের কিছু কঠিন সত্য উন্মোচন করে। লেখক গল্পের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, কীভাবে মানুষ ভালোবাসার নামে নিজেদের ভুল পথে চালিত করে।
উপন্যাসটি পাঠকদের হতাশ করতে পারে, আবার নতুন করে ভাবতে শেখাতে পারে। যারা সম্পর্কের জটিলতা এবং সমাজের কিছু কঠিন দিক নিয়ে নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য এই বইটি একটি ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান