ইউরোপের খাদ্য রাজধানী: স্পেনের ভিগোতে সি-ফুডের স্বাদ।
আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত স্পেনের একটি সুন্দর শহর হলো ভিগো। গ্যালিসিয়ার উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত এই শহরটি শুধু সুন্দর নয়, বরং ইউরোপের বৃহত্তম মৎস্য বন্দর হিসেবেও সুপরিচিত।
এখানকার মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমুদ্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই যারা সি-ফুড ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভিগো হতে পারে এক দারুণ গন্তব্য।
ভিগোর প্রধান আকর্ষণ হলো এর সি-ফুড। এখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে তাজা সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়, যা ভোজনরসিকদের মন জয় করে।
এখানকার “রিয়াস” (উপকূলীয় খাঁড়ি) অঞ্চলে উৎপাদিত হয় নানা ধরনের শেলফিস। স্থানীয় ভাষায় এখানকার মানুষকে “ভিগুইস” বলা হয়।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা সমুদ্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বসবাস করছে। এখানকার মানুষের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, “আমরা সবাই সমুদ্রের মানুষ।”
ভিগোর সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি গেলেই চোখে পড়ে নানা ধরনের নৌকার আনাগোনা। এখানে রয়েছে বিশাল মাছ ধরার পোতাশ্রয়, বিভিন্ন শিল্প ডক এবং নৌবন্দর।
শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে “ক্যালেই দে লাস ওস্ট্রাস” বা “অয়েস্টার স্ট্রিট”। এখানে বসে উপভোগ করা যায় তাজা অয়েস্টার।
এই রাস্তার আশেপাশে বিভিন্ন ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টগুলোতে স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়।
ভিগোর অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে ঝিনুক চাষ। এখানকার “বাতেইর” নামক কাঠের ভেলায় ঝিনুক চাষ করা হয়।
পর্যটকদের জন্য এখানকার “ব্লুসকাস” নামক একটি মেরিন ট্যুরিজম সংস্থা ভেলায় চড়ে এই ঝিনুক চাষের পদ্ধতি দেখায়।
এই অঞ্চলের প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
ভিগোর পুরাতন শহর “কাসকো ভেলো”-তে রয়েছে ঐতিহাসিক সব স্থাপত্য। সংকীর্ণ পথ, পাথরের বাড়ি, ছোট ছোট চত্বর আর অসংখ্য বার ও রেস্তোরাঁ এই শহরের আকর্ষণ।
রাতে এখানকার আলোকসজ্জা শহরটিকে আরও মোহনীয় করে তোলে। “তাবেরনা আ পেদ্রা”র মতো ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোতে স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়।
ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি ভিগোতে আধুনিক খাবারেরও স্বাদ নেওয়া যায়। “ক্রুদেজা” রেস্তোরাঁটিতে সি-বাস, স্ক্যালপ বা স্যামন দিয়ে তৈরি সি-ফুডের নানা পদ পাওয়া যায়।
যারা একটু ভিন্ন স্বাদের খাবার পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই জায়গাটি আদর্শ। এছাড়াও, “ভালদেভেজ” এর মত আকর্ষণীয় রেস্তোরাঁগুলোতেও নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
ভিগোর আশেপাশেও ঘুরে বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা রয়েছে। “ইসলাম সিইয়েস” দ্বীপপুঞ্জ, “কাম্বাদোস” শহর এবং “করুবেডো” প্রকৃতি উদ্যান এর মধ্যে অন্যতম।
“কাম্বাদোস”-এ আলবারিনো ওয়াইনের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে, যা এখানকার একটি বিশেষত্ব।
ভিগো, একদিকে যেমন সমুদ্রের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সাক্ষী, তেমনই সি-ফুডের এক অসাধারণ ভাণ্ডার।
যারা ইউরোপ ভ্রমণে যেতে চান এবং সি-ফুড ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভিগো একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
এখানকার মানুষের আন্তরিকতা, ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং অবশ্যই সুস্বাদু খাবার—সবকিছু মিলিয়ে ভিগো একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা দিতে প্রস্তুত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।