যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে নতুন ধাক্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সৌর প্যানেল আমদানিতে বিশাল শুল্ক আরোপ।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি দেশ থেকে সৌর প্যানেল আমদানির ওপর বিশাল শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে সৌর প্যানেল আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়বে, যা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
জানা গেছে, এই শুল্কের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩,৫২১ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর জানিয়েছে, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনাম থেকে সৌর প্যানেল আমদানির ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হবে। মূলত, গত এক বছর ধরে চলা একটি তদন্তের ফলস্বরূপ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো অভিযোগ করে আসছিল যে, চীন তাদের দেশে ভর্তুকিযুক্ত, সস্তা সৌর প্যানেল সরবরাহ করে বাজারকে প্রভাবিত করছে।
শুল্কের হারে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। কম্বোডিয়া থেকে আসা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩,৫২১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। কারণ, দেশটির কোম্পানিগুলো মার্কিন তদন্তে সহযোগিতা করেনি।
মালয়েশিয়ার চীনা প্রস্তুতকারক জিংকো সোলারের পণ্যের ওপর প্রায় ৪১ শতাংশ শুল্ক এবং থাইল্যান্ডের ট্রিনা সোলারের পণ্যের ওপর ৩৭৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সৌর প্যানেলের দাম বাড়তে পারে, যা দেশটির সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।
একইসাথে, বিশ্ববাজারে সৌর প্যানেলের সরবরাহ কমে গেলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (International Energy Agency – IEA)-এর প্রধান ফাতিহ বিরোল জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য একটি সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি নিরাপত্তার গুরুত্ব বেড়েছে।
তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন: সরবরাহ ব্যবস্থার বৈচিত্র্য, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরবরাহকারীদের মধ্যে বৈচিত্র্য আনা জরুরি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো জ্বালানির জন্য বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সৌর বিদ্যুতের গুরুত্ব আরও বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে, বাংলাদেশের বাজারেও সৌর প্যানেলের দাম প্রভাবিত হতে পারে। যদিও, বাংলাদেশে সৌর প্যানেলের আমদানি খুব বেশি হয় না, তবুও বিশ্ব বাজারের এই পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর যে চেষ্টা চলছে, তাতেও এই শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।