ফুটবল ভালোবাসতেন পোপ ফ্রান্সিস: খেলার জগৎ হারালো এক মহান ভক্ত!

ফুটবলের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের আবেগ: খেলাধুলার মাধ্যমে একতার বার্তা

ফুটবল খেলার প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের গভীর ভালোবাসার কথা অনেকেরই জানা। খেলাধুলাকে তিনি শুধু একটি বিনোদন হিসেবেই দেখেননি, বরং এর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন একতা, সহযোগিতা এবং মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের এক দারুণ মাধ্যম।

আর্জেন্টিনার ক্লাব সান লরেন্সোর প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ দুর্বলতা। এই ক্লাবটির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল আজীবনের।

ছোটবেলায় হোর্হে মারিও বের্গোগলিও (পরবর্তীতে যিনি পোপ ফ্রান্সিস হন) বুয়েনস আয়ার্সের ফ্লোরেস পাড়ায় বন্ধুদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা “পোটরেরো” নামক ফাঁকা জায়গায় ফুটবল খেলতেন। খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল, তবে নিজের খেলার দক্ষতা নিয়ে তিনি খুব একটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না।

তাঁর দুর্বল খেলার জন্য বন্ধুদের কাছে তিনি “হার্ড ফুট” নামে পরিচিত ছিলেন।

পোপ হওয়ার পর ২০১৩ সালে যখন সান লরেন্সো তাদের প্রথম কোপা লিবার্তাদোরেস জেতে, তখন তিনি বিশেষভাবে আনন্দিত হয়েছিলেন। ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁকে সম্মানিত করতে চেয়েছিল, তাই তাঁরা তাঁদের ভবিষ্যৎ স্টেডিয়ামের নাম পোপ ফ্রান্সিসের নামে রাখার পরিকল্পনা করেন।

এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সান লরেন্সো ক্লাবের সদস্য ছিলেন, তাঁর সদস্য নম্বর ছিল ৮৮,২৩৫।

ফুটবল বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা উঠলে পোপ ফ্রান্সিসের একটি বিশেষ মন্তব্য শোনা যায়। ইতালির একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দিয়েগো মারাদোনা এবং লিওনেল মেসির মধ্যে সেরা খেলোয়াড় বাছাই করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে তৃতীয় একজন খেলোয়াড়ের নাম যোগ করেন।

তিনি বলেন, “আমি তৃতীয় একজনের নাম যোগ করব—পেল।”

ফুটবল খেলার প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে দেওয়া তাঁর বক্তব্যে। খেলাধুলার মাধ্যমে কিভাবে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন।

খেলোয়াড়দের প্রতি তাঁর পরামর্শ ছিল, “তোমরা কখনোই তোমাদের শিকড় ভুলো না। মাঠের সেই প্রান্তগুলো, প্রার্থনার স্থান, ছোট ক্লাব—এগুলো সবসময় মনে রাখবে।”

পোপ ফ্রান্সিস ব্যক্তিগত জীবনে টেলিভিশন দেখা থেকে বিরত থাকতেন, কারণ তিনি কারমেন-এর ভার্জিনের কাছে এমন একটি প্রতিশ্রুতি করেছিলেন। তবে খেলাধুলার খবর জানার জন্য তিনি রেডিওর ওপর নির্ভর করতেন।

ভ্যাটিকানে আসার পর সুইস গার্ডরা তাঁকে সান লরেন্সো এবং আর্জেন্টিনার খেলার ফলাফল জানাতেন। একবার তো তিনি জেনেছিলেন যে আর্জেন্টিনা পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে।

খেলাধুলার উন্মাদনা এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন তিনি। তিনি খেলোয়াড়দের মধ্যে নম্রতা এবং তাঁদের শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, মাঠের খেলা হোক কিংবা জীবনের অন্য কোনো দিক, সেখানে দলবদ্ধভাবে কাজ করার গুরুত্ব অপরিসীম।

তথ্য সূত্র:Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *