উত্তর ক্যারোলিনার মানুষ: ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত এখনো, ত্রাণ বন্ধ!

উত্তর ক্যারোলিনার সোয়ানানোয়া নদী উপত্যকায় আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় হেলেন। এর সাত মাস পরেও সেখানকার মানুষের জীবনে সেই ঝড়ের ক্ষতগুলো স্পষ্ট।

বন্যার কারণে ভূমিধস, গাছ উপড়ে পড়া, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখনও ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা যায়নি, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তাঁবুতে বা অস্থায়ী আবাসনে দিন কাটাচ্ছে।

জানা যায়, এই কাউন্টিতে ৪৩ জন মারা গেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে এখানে এসেছিলেন এবং ফেডারেল সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “পুনর্গঠনের প্রতিটি ধাপে আমরা আপনাদের পাশে থাকব।”

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

ফেডারেল সহায়তা হ্রাসের ফল।

দুর্যোগের পর সেখানকার মানুষের প্রয়োজনগুলো সরাসরি জানতে এবং তাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত ছিল সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর একটি বিশেষ দল। তারা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে মিলিত হয়ে কাজ করার কথা ছিল।

কিন্তু এপ্রিলের শুরুতে সেই দলটিকে ছাঁটাই করা হয়। এর ফলে, সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সাহায্যের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

সিডিসির এই দলটির প্রধান কাজ ছিল, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রায় ২১০টি পরিবারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের জরুরি প্রয়োজনগুলো চিহ্নিত করা। এই কাজটি ‘ক্যাস্পার’ নামে পরিচিত।

ক্যাস্পার হলো কমিউনিটি অ্যাসেসমেন্ট ফর পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি রেসপন্স-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই ধরনের দল ফেডারেল সরকারের মধ্যে একমাত্র ছিল।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের জরুরি স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হতো এই ক্যাস্পারের মাধ্যমে। কিন্তু সিডিসি দলটিকে ছাঁটাই করার কারণে সেই কাজটি বন্ধ হয়ে যায়।

এর ফলে, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগও সমস্যায় পড়ে। তারা বুঝতে পারছিল না কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের (এইচএইচএস) সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সংবাদ মাধ্যমে জানান, সরকারি দপ্তরগুলোকে আরও কার্যকর করতে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে, পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও অনুশীলন বিভাগের অধীনে থাকা প্রায় ২০০ জন বিশেষজ্ঞকে চাকরি হারাতে হয়।

এই বিভাগের অধীনে ক্রুজ জাহাজে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব তদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা হতো। এছাড়াও, শৈশবে সীসা দূষণ প্রতিরোধ এবং জাতীয় বিষ তথ্য ব্যবস্থার মতো জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।

সিডিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে এমন কোনো ফেডারেল সংস্থা নেই, যারা তাদের বিভাগের মতো কাজ করে। ফলে, এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনো অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর মেরামত করতে পারেনি। অনেকে হয়তো জানেন না, সরকারি সহায়তার জন্য তারা কীভাবে আবেদন করবেন।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, ঝড়ের কারণে তাদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় একটি মুদি দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ডাকঘরও এখনো খোলেনি। যাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা হয়তো উদ্বাস্তু হয়েছেন, না হয় তাদের বাড়িতে বসবাসের মতো পরিস্থিতি নেই।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা ‘সোয়ানানোয়া কমিউনিটিস টুগেদার’-এর বেথ ট্রিগ বলেন, “ঝড়ের পর ফেডারেল এজেন্সিগুলোর সাহায্য কমে যাওয়ায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

বর্তমানে, বুনকোম কাউন্টিতে ১,৪০০-এর বেশি পরিবার ফেডারেল জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (ফেমা) থেকে ভাড়ার জন্য সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু অনেকের পক্ষেই এই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সোয়ানানোয়া উপত্যকায় খাদ্য সরবরাহকারী একটি অলাভজনক সংস্থা ‘বাউন্টি অ্যান্ড সোল’। তারা জানাচ্ছে, ঝড়ের পর তাদের সেবার চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে।

তাদের প্রতিষ্ঠাতা আলী কাসপারিয়ান বলেন, “এখনও অনেক মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন। মাঝে মাঝে মনে হয়, যেন আমরা বিস্মৃত হয়ে গেছি।”

বর্তমানে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ ও অন্যান্য সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ফেডারেল সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখা জরুরি।

এই প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *