অস্কারে বড় পরিবর্তন! ছবি না দেখলে ভোট নয়, নতুন নিয়ম

অস্কারের নির্বাচকমণ্ডলীকে এখন থেকে মনোনয়ন পাওয়া সব সিনেমা দেখতে হবে, এমনটাই জানা গেছে। চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কারের আয়োজক অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস (AMPAS)।

তারা ভোটিং প্রক্রিয়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, অস্কারের ভোটিং প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ করা।

আগে, অস্কারের ভোটারদের জন্য মনোনীত সব সিনেমা দেখা বাধ্যতামূলক ছিল না। তারা যে বিভাগে যোগ্য মনে করতেন, সেই বিভাগের সিনেমাগুলো দেখেই ভোট দিতে পারতেন।

তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, কোন সিনেমাগুলো অ্যাকাডেমির সদস্যরা দেখছেন, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। এমনকি, বিভিন্ন সময়ে কিছু ভোটার তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানিয়েছেন, তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হয়তো শেষ পর্যন্ত দেখেননি অথবা সেগুলোর পুরোটা দেখা হয়ে ওঠেনি।

এবার নিয়ম করা হয়েছে, ফাইনাল রাউন্ডে ভোট দেওয়ার আগে প্রত্যেক ভোটারকে প্রতিটি বিভাগের জন্য মনোনীত হওয়া সব সিনেমা দেখতে হবে। অ্যাকাডেমি মনে করে, এর ফলে ভোটের গুণগত মান বাড়বে এবং যোগ্য সিনেমাগুলো আরও বেশি গুরুত্ব পাবে।

শুধু তাই নয়, অ্যাকাডেমি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার, শরণার্থী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সুযোগ এবং নতুন ‘কাস্টিং’ বিভাগ নিয়েও কিছু নতুন নিয়ম তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে এখন থেকে শরণার্থীদের জন্য নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। এখন থেকে কোনো শরণার্থী অথবা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য অন্য দেশে বসবাসকারী চলচ্চিত্র নির্মাতা, নিজের দেশ ছাড়াও অন্য কোনো দেশের হয়ে এই বিভাগে অংশ নিতে পারবেন।

তবে, যে দেশ থেকে সিনেমাটি জমা দেওয়া হবে, সেই দেশের সরকার নিশ্চিত করবে যে, চলচ্চিত্রটির সৃজনশীলতার মূল দায়িত্বে ছিলেন সেই দেশের নাগরিক, বাসিন্দা অথবা শরণার্থী অথবা আশ্রয়প্রার্থী কোনো ব্যক্তি।

উদাহরণস্বরূপ, ইরানের চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রাসৌলফ-এর কথা বলা যায়। যিনি তার ‘দ্য সিড অফ দ্য স্যাক্রেড ফিগ’ সিনেমা মুক্তির জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। জার্মানি, যেখানে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই দেশ থেকে সিনেমাটি অস্কারের জন্য জমা দেওয়া হয় এবং এটি মনোনয়নও পেয়েছিল।

যদিও রাসৌলফের বন্ধু ও স্বজাতি জাফর পানাহিসহ আরও অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতার সিনেমা জমা দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এই পরিবর্তনের ফলে, যারা নিজের দেশ ছাড়তে পারেননি, তাদের হয়তো কোনো পরিবর্তন হবে না।

অন্যদিকে, সিনেমায় এআই-এর ব্যবহার নিয়েও নতুন নিয়ম তৈরি হয়েছে। অ্যাকাডেমি জানিয়েছে, কোনো সিনেমার ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা হলেও, তা মনোনয়নের সম্ভাবনা বাড়াবেও না, কমাবেও না।

তবে, সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে মানুষের অবদানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্র্যাডি করব্যাটের ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ সিনেমার এডিটর জানিয়েছিলেন, হাঙ্গেরীয় ভাষায় সংলাপ উন্নত করতে এআই ব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়াও, নতুন ‘কাস্টিং’ বিভাগের জন্য কিছু নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। শর্টলিস্টে আসা ১০টি সিনেমার নির্মাতাদের সঙ্গে এই বিভাগের সদস্যরা একটি বিশেষ ‘ব্রেক-অফ’ অনুষ্ঠানে মিলিত হবেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেবেন।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৮ সাল থেকে অস্কারে ‘স্টান্ট ডিজাইন’ নামে নতুন একটি বিভাগ যুক্ত হতে যাচ্ছে।

আগামী ১৫ই মার্চ, ২০২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কারের পরবর্তী আসর। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন কমেডিয়ান কোনান ও’ব্রায়েন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *