গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত, ধ্বংস হয়েছে উদ্ধার সরঞ্জাম।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার চালানো এই হামলায় ধ্বংস করা হয়েছে বুলডোজারসহ জরুরি ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের জন্য সরবরাহ করা বিভিন্ন সরঞ্জাম। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলে চালানো হামলায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। হামলায় ধ্বংস হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে ছিল বুলডোজার, যা মিশর ও কাতার সরবরাহ করেছিল। এই বুলডোজারগুলো ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে ব্যবহারের কথা ছিল। এর আগে, গত জানুয়ারিতে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
তবে ইসরায়েল গত মাসে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, খাদ্য, জ্বালানি ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহও বন্ধ রয়েছে।
গাজার জাবালিয়া এলাকার একটি পৌরসভা জানিয়েছে, হামলায় তাদের পার্কিং গ্যারেজে রাখা মিশরের দেওয়া নয়টি বুলডোজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলোর সরবরাহ করা একটি ওয়াটার ট্যাঙ্কার, একটি মোবাইল জেনারেটর এবং পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত একটি ট্রাকও।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এসব হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তারা বরাবরই বলে আসছে, তাদের লক্ষ্য কেবল জঙ্গি সংগঠনগুলো এবং বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাসকে দায়ী করে থাকে, কারণ হামাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কার্যক্রম চালায়।
খান ইউনিসে একটি বহুতল ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ ৯ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন একটি ২ বছর বয়সী শিশু এবং তার বাবা-মা। নিহত শিশুর দাদা আওয়াদ দাহলিজ জানান, “তারা ঘুমাচ্ছিল, ঘুমের মধ্যেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের তো কোনো দোষ ছিল না।”
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে চালানো পৃথক হামলায় নিহত হয়েছে ৩ শিশু ও তাদের বাবা-মা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তবে নিহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক এবং কতজন যোদ্ধা, সে বিষয়ে তারা বিস্তারিত জানায়নি।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলায় প্রায় ২০ হাজার জঙ্গি নিহত হয়েছে, তবে তারা এর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। হামাসের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
হামাস এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে ধরে রেখেছে। তাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হয়। হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি পেলে তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে।
তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। একইসঙ্গে গাজায় তথাকথিত নিরাপত্তা অঞ্চল ধরে রাখার কথাও জানিয়েছে তারা।
এদিকে, লেবাননেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৈরুতের দক্ষিণ-পূর্বে চালানো ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের লেবানীয় শাখার সদস্য হুসেইন আতউই। এছাড়াও, দক্ষিণাঞ্চলীয় টাইর প্রদেশে চালানো হামলায় নিহত হয়েছে আরও একজন।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও ইসরায়েল সেখানে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েল বলছে, তারা জঙ্গি ও অস্ত্র ভাণ্ডারকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
লেবানন সরকারের দাবি, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯০ জন নিহত এবং ৪৮৫ জন আহত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস