মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যেকার সম্পর্ক বহু বছর ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। এই দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বিশ্ব শান্তির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আল জাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এই দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের শুরুটা হয় ১৯৫০-এর দশকে, যখন তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে।
এরপর ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর এই অঞ্চলে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, যা পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্র, বরাবরই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সন্দেহ করে এসেছে এবং এটিকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করে।
তাদের মূল উদ্বেগ হলো, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে।
এই উদ্বেগের ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানের উপর বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত করা এবং দেশটির উপর চাপ সৃষ্টি করা।
দীর্ঘ আলোচনার পর, ২০১৫ সালে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত।
এই চুক্তির অধীনে, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয় এবং এর বিনিময়ে ইরানের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
তবে, ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
বর্তমানে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ এখনো বিদ্যমান।
ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সীমিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বিশ্ববাজারে তেলের দামে প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এছাড়াও, এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
তাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা, যাতে বিশ্ব শান্তি বজায় থাকে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা