ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি: বিশ্বকে মন্দার পথে ঠেলছে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘মারাত্মক নেতিবাচক ধাক্কা’ লেগেছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক আউটলুক প্রতিবেদনে আইএমএফ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য নীতির ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতির এই খারাপ অবস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২ এপ্রিল থেকে শুল্ক বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় নিকট ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।

প্রতিবেদনে বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস চলতি বছরে ২.৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা জানুয়ারিতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে ০.৫ শতাংশ কম। আইএমএফ বলছে, তারা বর্তমান বাণিজ্য নীতির ভিত্তিতে এই পূর্বাভাস তৈরি করেছে। তবে ভবিষ্যতের জন্য আরও খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে প্রত্যেকটি প্রধান অর্থনীতির উপর এই শুল্ক নীতির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি চলতি বছর ১.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে, যা জানুয়ারিতে করা ১.৬ শতাংশের পূর্বাভাসের চেয়ে কম। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ২.৭ শতাংশ থেকে কমে ১.৮ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে তারা ইউরোপের জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হবে। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি যে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, সে বিষয়েও তারা অবগত। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা কাজ করবে।

আইএমএফের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ কমাচ্ছে। এর ফলে ব্যবসার ক্ষেত্রেও খারাপ প্রভাব পড়বে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের বিনিয়োগ স্থগিত করতে পারে এবং কেনাকাটা কমিয়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসার জন্য তাদের ঋণ সরবরাহ পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

আইএমএফের মতে, এই পরিস্থিতি বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, প্রতিকূল বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তাদের ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অনেক ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক সাহায্য কমালে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

যুক্তরাজ্য সম্প্রতি তাদের উন্নয়ন বাজেট কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা কমে গেলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর উপর ঋণের চাপ আরও বাড়বে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান এর উপর।

আইএমএফ বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ঋণ পুনর্গঠন করতে এবং সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করায়, এই ধরনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ার বাজারের দরপতন অব্যাহত থাকায়, আইএমএফ ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে আর্থিক বাজারে যে ধাক্কা লেগেছে, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সংকট তৈরি করতে পারে।

ডলারের দর পতনও দেখা যাচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরি পাওয়েল-কে সুদের হার কমাতে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রাম্প এর সমালোচনা করেছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *