**ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা, সতর্কবার্তা আইএমএফের**
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, সংস্থাটি বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকদের সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারের অস্থিরতা বাড়ছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওয়াশিংটনে আইএমএফের স্প্রিং মিটিংয়ের প্রাক্কালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, এই উদ্বেগের কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ও বন্ডের অতিরিক্ত মূল্য, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ ঋণ-মাত্রা এবং সার্বভৌম বন্ড বাজারে অস্থিরতা।
এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আইএমএফের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলো, যেমন- বাংলাদেশ, হঠাৎ করে ঋণ গ্রহণের খরচ বেড়ে গেলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, বন্ড মার্কেটের এই ধরনের অস্থিরতা তাদের বিদেশি ঋণ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নন-ব্যাংক ঋণদাতাদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ব্যাংকগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে, এই ধরনের ঋণদাতাদের প্রভাব বেড়েছে, যা বাজারের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আইএমএফ মনে করে, এই নন-ব্যাংক ঋণদাতাদের কার্যক্রম আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এছাড়া, ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত মূলধন ও তারল্য নিশ্চিত করার জন্য, ২০০৮ সালের সংকট পরবর্তী সময়ে প্রণীত ব্যাসেল-৩ নিয়মাবলি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বেসেল-৩ নিয়মাবলি ব্যাংকগুলোকে আরও শক্তিশালী করে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের একজন নীতি নির্ধারক, মেগান গ্রিন, বলেছেন যে, মার্কিন শুল্ক নীতি যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতিকে হয়তো কমিয়ে দেবে, বরং বাড়াবে না। যদিও তিনি এই বিষয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মেগান গ্রিন এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি। কারণ, এর ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা আমদানি নির্ভর দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
এছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান