যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ওয়াইওমিং-এর একটি আদিবাসী সম্প্রদায়, ইস্টার্ন শশোন উপজাতি, তাদের এলাকায় বাইসন বা আমেরিকান মহিষকে বন্যপ্রাণী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হলো, প্রাণীটির সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা এবং এটিকে গবাদি পশুর বদলে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখা।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও অবদান রাখতে চাইছে। ওয়াইওমিং-এর উইন্ড রিভার রিজার্ভেশনে, জেসন বাল্ডেস নামের এক ব্যক্তি গত এক দশক ধরে মহিষের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছেন।
তিনি উইন্ড রিভার বাফেলো ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক এবং ইস্টার্ন শশোন উপজাতির সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে বর্তমানে ইস্টার্ন শশোন উপজাতির কাছে ১১৮টি এবং নর্দার্ন আরাপাহো উপজাতির কাছে ৯৭টি মহিষ রয়েছে।
বাল্ডেসের মতে, উপজাতিদের খাদ্য নিরাপত্তা, সংস্কৃতি এবং পুষ্টির জন্য মহিষ ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। এছাড়াও, সামগ্রিকভাবে বাইসনের সংখ্যা বৃদ্ধি করাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই পদক্ষেপ একটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, বন্যপ্রাণী বলতে সেইসব প্রাণীকেই বোঝানো হয়, যাদের ওপর মানুষের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
যেমন, হরিণ বা ভালুকের মতো বন্যপ্রাণী। কিন্তু মহিষকে বন্যপ্রাণী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে, এদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। এটি তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে অবাধে বিচরণ করতে সাহায্য করবে এবং তাদের প্রতিপালন ও সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এই পরিবর্তনের একটি বড় কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব এখানে প্রধান নয়, তবে বন্য মহিষ ফিরিয়ে আনার ফলে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মহিষ তৃণভূমি অঞ্চলে বিচরণ করে এবং এর ফলে ঘাস ও অন্যান্য উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়, যা কার্বন শোষণে সাহায্য করে।
আগে, আমেরিকান মহিষ শিকার এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। ১৮৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০ লক্ষ মহিষ ছিল, যা পরবর্তী ২০ বছরে ৫০০-রও কমে দাঁড়ায়।
বর্তমানে, উত্তর আমেরিকায় প্রায় ২০,০০০ বন্য মহিষ রয়েছে। এদের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন খামারে পালন করা হয়, যেখানে এদের মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
তবে, মহিষকে বন্যপ্রাণীর মর্যাদা দেওয়ার ফলে, এদের প্রতিপালন ও সংরক্ষণে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। ইস্টার্ন শশোন উপজাতি মনে করে, এই সিদ্ধান্ত তাদের স্বাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তারা চায় মহিষকে সেইভাবে দেখতে, যেমনটা তারা একসময় দেখত— প্রকৃতির অংশ হিসেবে, কোনো অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে নয়।
এই পরিবর্তনের ফলে, মহিষকে বন্য পরিবেশে বাঁচানো এবং তাদের প্রাকৃতিক আচরণ বজায় রাখার সুযোগ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সাহায্য করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস