জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যু, শোকের ছায়া।
জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) বিকাল বেলা বাইসারান উপত্যকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, পর্যটকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় জঙ্গিরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক। এছাড়াও, বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন, তবে তাদের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
ঘটনার সময় সেখানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্সের কাশ্মীর সফরের কথা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কয়েকজন বন্দুকধারী পাহাড়ের দিক থেকে এসে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়। গুলির শব্দে পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
আহতদের উদ্ধারের জন্য দ্রুত হেলিকপ্টার নামানো হয়। কারণ দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে সহজে সড়ক পথে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এক স্থানীয় ট্যুর গাইড জানান, গুলির শব্দ শুনে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আহত কয়েকজনকে ঘোড়ার গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠান।
তিনি বলেন, “আমি সেখানে কয়েকজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।”
আহত এক নারী সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, “আমার স্বামীকে মাথায় গুলি করা হয়েছে। আরও সাতজন আহত হয়েছেন।”
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো সবচেয়ে বড় হামলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ‘হীন কাজের’ তীব্র নিন্দা করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও জোরদার হবে।”
এদিকে, নয়াদিল্লীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোন করে ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে এবং হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করে।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, ২-৩ জন বন্দুকধারী পর্যটকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এই এলাকা পায়ে হেঁটে অথবা ঘোড়ার গাড়িতে করে যেতে হয়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “আমাদের সামনেই গুলি চলছিলো। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো বাজি ফাটানো হচ্ছে, কিন্তু যখন অন্যদের চিৎকার শুনতে পেলাম, তখন আমরা নিজেদের বাঁচাতে দৌড়ে পালাই।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “আমরা প্রায় ৪ কিলোমিটার ধরে দৌড়েছি… এখনও কাঁপছি।”
এই হামলার প্রতিবাদে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।
একটি জঙ্গি সংগঠন ‘কাশ্মীর প্রতিরোধ’ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা ভারতীয় বসতি স্থাপন এবং অঞ্চলের ‘জনসংখ্যার পরিবর্তন’-এর অভিযোগ এনেছে।
উল্লেখ্য, কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই অঞ্চলের কিছু অংশ ভারত এবং কিছু অংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে।
১৯৮৯ সাল থেকে এখানে জঙ্গি সহিংসতা দেখা যায়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতার ঘটনা কিছুটা কমেছে।
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা ২০১৯ সালে বাতিল করার পর থেকে সেখানে বহিরাগতদের বসতি স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সরকার এটিকে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশ্যে চালানো একটি ‘টার্গেটেড হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
পর্যটকদের ওপর এমন হামলা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।
তবে ২০১৯ সালে নয়া দিল্লি কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর থেকে সেখানে স্থানীয় হিন্দুদের এবং বহিরাগত শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে।
বাইসারান এলাকাটি গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী হামলাকারীদের খোঁজে ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান