ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে রাশিয়া সম্ভবত তাদের অধিকৃত নয় এমন কিছু অঞ্চলের উপর থেকে দাবি ত্যাগ করতে রাজি হতে পারে। তবে এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু ছাড় দিতে হবে বলে জানা যাচ্ছে।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বুধবার এই আলোচনার আয়োজন করছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে যে তারা ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিক।
বিনিময়ে রাশিয়া ইউক্রেনের যে অংশগুলো তাদের দখলে নেই, সেগুলোর উপর থেকে নিজেদের দাবি ত্যাগ করতে পারে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউস থেকে এমন কোনো প্রস্তাব এখনো পর্যন্ত তাকে জানানো হয়নি।
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, তার দেশ রাশিয়ার এই প্রস্তাব সমর্থন করতে পারে না।
আলোচনায় উঠে আসা পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাশিয়া যদি তাদের আঞ্চলিক দাবিগুলো থেকে সরে আসে, তাহলে বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্র বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
ইউক্রেনও এই ধরনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হতে পারে, যদি রাশিয়ার দখলকে স্থায়ী বা বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে না হয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে (NATO – নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন) যোগ না দেয়।
কিয়েভ অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই বিষয়টি মেনে নিতে পারে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা বিষয়ক নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে প্রায় ৩০টি দেশের একটি জোট ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’ গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এই জোটে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
তার পরিবর্তে হোয়াইট হাউসের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ এই আলোচনায় যোগ দেবেন।
লন্ডনে এই আলোচনা এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ বন্ধের আন্তরিকতা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সন্দেহ বাড়ছে।
ইস্টার সানডের সময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্বল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও, ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো যে কার্যত মিথ্যা, ইউক্রেনও সেই বিষয়ে একমত।
তিনি আরও জানান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগ (Defence Intelligence) নিশ্চিত করেছে যে ইস্টার সময়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি।
মঙ্গলবার জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া ক্রমাগত ফ্রন্টলাইনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
তবে তিনি এ কথাও উল্লেখ করেন যে, হামলার সংখ্যা কিছুটা কমানো হয়েছে এবং দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
লন্ডনের বৈঠকে যুদ্ধবিরতি কেমন হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে শান্তি কিভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
হোয়াইট হাউসের মধ্যস্থতায় প্রায় তিন মাস ধরে আলোচনা চললেও, এখন পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের ধারণা, পুতিন এখনো ইউক্রেনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছেন, তাই যুদ্ধ বন্ধে রাজি নন।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের সম্পূর্ণ অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে।
এর মধ্যে কিয়েভকে খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া শহর ছেড়ে দিতে হবে।
ইউক্রেন এই প্রস্তাব মানতে রাজি নয়।
সংবাদ সংস্থা ফিনান্সিয়াল টাইমসের (Financial Times) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে, তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে।
তবে জেলেনস্কি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন।
তিনি বলেছেন, এটি ইউক্রেনের সংবিধানের পরিপন্থী।
এছাড়া জানা গেছে, রাশিয়া জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনকে না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে পারে।
পুতিন মঙ্গলবার ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
যদি তাই হয়, তাহলে ২০২২ সালের বসন্তের পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান