এক সময়ের বিলুপ্তপ্রায় পাখি, সিহেক (Sihek), আবারও প্রকৃতির বুকে ডিম পাড়তে শুরু করেছে। প্রায় ৪০ বছর পর, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে তাদের নতুন আবাসস্থলে এই বিরল ঘটনাটি ঘটেছে।
লন্ডন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (Zoological Society of London – ZSL) এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (The Nature Conservancy – TNC) সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সিহেক পাখির এই দলটিকে হাওয়াইয়ের পালমিরা অ্যাটল অভয়ারণ্যে অবমুক্ত করা হয়েছিল।
এক সময়ের বিলুপ্তপ্রায় এই পাখিটি গুয়ামের স্থানীয় প্রজাতি ছিল এবং ১৯৮০-র দশকে এটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়। পাখিগুলির এই নতুন যাত্রা শুরু করার পেছনে ছিল সংরক্ষণবিদদের এক দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা।
ZSL সহ আরও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার মিলিত উদ্যোগে এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।
সিহেক পাখি, যাদের গুয়াম কিংফিশার নামেও ডাকা হয়, তাদের নতুন পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছে। অবমুক্ত করার পর, নয়টি পাখির মধ্যে আটটি জোড়া তৈরি করেছে এবং তাদের মধ্যে তিনটি জোড়া ইতিমধ্যেই ডিম দিয়েছে।
ZSL-এর ইনস্টিটিউট অফ জুওলজির অধ্যাপক জন ইউয়েন এই ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ডিমগুলো চকচকে বা রঙিন না হলেও, এগুলো অনেক বেশি মূল্যবান, কারণ এটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত থেকে সিহেক-কে বাঁচানোর দীর্ঘ প্রচেষ্টার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
লন্ডন চিড়িয়াখানার বার্ড কিপার শার্লট জেমস, যিনি পাখিগুলোকে বড় করতে সাহায্য করেছিলেন, তিনি বলেন, “ছোট্ট ডিম এবং ছানা থেকে তাদের বড় হতে দেখাটা ছিল অত্যন্ত আনন্দের। এখন তাদের নিজেদের ছানা বড় করতে দেখাটা গর্বের।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তাদের ভালোভাবে বাঁচতে দেখা এবং ইতিহাস তৈরি করতে দেখে একজন গর্বিত অভিভাবকের মতোই লাগছে।”
প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (TNC) তাদের অভয়ারণ্যকে সিহেকদের জন্য বেছে নিয়েছিল, কারণ এটি শিকারী-মুক্ত এবং একটি সুরক্ষিত এলাকা। TNC-এর সিনিয়র বার্ড কনজারভেশন স্পেশালিস্ট কাইলা বেকার ডিম আবিষ্কারের পর তাদের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন।
গুয়ামের স্থানীয় চামোরু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই পাখি ‘সিহেক’ নামে পরিচিত। জানা যায়, ১৯৪০-এর দশকে বাদামী গাছের সাপ (brown tree snake) আসার পরেই এই পাখির সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করে এবং ১৯৮৮ সালে শেষ বন্য সিহেক দেখা গিয়েছিল।
পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পরে, বিজ্ঞানীরা ২৯টি সিহেক পাখির প্রজনন শুরু করেন। স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা ও সংরক্ষণ কেন্দ্র (Smithsonian’s National Zoo and Conservation) অনুসারে, এই পাখি মাঝারি আকারের এবং শক্তিশালী ঠোঁটযুক্ত হয়ে থাকে।
গুয়াম ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার ডিভিশন অফ অ্যাকুয়াটিক অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ রিসোর্সেস-এর ইয়োলান্ডা টোপাসনা বলেন, “গুয়াহান সিহেক আমাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, যার শুরুটা হয়েছিল ‘টিউটুহান’-এর হাত ধরে! গত বছর প্রথম যে বাচ্চাটির জন্ম হয়েছিল, তার নাম রাখা হয়েছিল ‘টিউটুহান’, যার অর্থ ‘শুরু’। সে শুরু থেকেই নিজের খাবার খাওয়ার জন্য অস্থির ছিল।”
তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এরপর কি? ZSL এবং TNC-এর মতে, পাখিগুলোকে তাদের বাচ্চাদের লালন-পালন করার কৌশল শিখতে কিছু সময় লাগবে। তাদের মতে, “ডিম পাড়ার কয়েক রাউন্ডের পরেই পাখিগুলো তাদের দক্ষতা অর্জন করবে এবং ছানা ফোটাতে সক্ষম হবে।” গ্রীষ্মকালে আরও কিছু সিহেক-কে পালমিরা অ্যাটলে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: পিপল