চীন নিয়ে ট্রাম্পের চাঞ্চল্যকর ঘোষণা: শুল্ক কমবে, তবে…

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, তার প্রভাব এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনুভূত হচ্ছে। সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের উপর আরোপিত শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবে তা একেবারে শূন্যের কোঠায় নামবে না বলেও জানান তিনি।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মন্তব্যের আগে, তার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট উচ্চ শুল্ককে টেকসই নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প জানান, চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে, তবে তা শূন্যের কোঠায় নামবে না।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কায় রয়েছেন।

উল্লেখ্য, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও, বাণিজ্য যুদ্ধের অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোর বিষয়ে আলোচনা করছে।

ট্রাম্প চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চাইছেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ‘নরম’ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেছেন। তিনি জানান, দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে চায়।

তবে, চীনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। চীনের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নাও পড়তে পারে, তবে বিশ্ব অর্থনীতির উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়লে, তা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, বাংলাদেশের আমদানি খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। আবার, বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বলতার কারণে, বাংলাদেশের রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য সুযোগও রয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধের কারণে, কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিকল্প বাজার খুঁজে নিতে পারেন। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাটজাত পণ্যের মতো খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

তবে, এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

চীনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে অন্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে, যা চীনের স্বার্থের পরিপন্থী। কোরিয়ার কিছু কোম্পানির প্রতি চীন সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে পণ্য রপ্তানি না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

বর্তমানে, ট্রাম্প প্রশাসন অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাবও পাওয়া যাচ্ছে।

বাণিজ্য যুদ্ধের এই অনিশ্চয়তার মধ্যে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *