চিৎকার করুন! সন্তানদের ভালো মানুষ করতে বিশ্ব থেকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা

ছোট্ট শিশুদের মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা প্রচলিত আছে। কোনো সংস্কৃতিতে শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়, আবার কোনো সংস্কৃতিতে তাদের শাসনের কড়া নিয়মের মধ্যে বড় করে তোলার চল দেখা যায়।

তবে সব সংস্কৃতির মানুষজনই একটি বিষয়ে একমত—শিশুদের ভালোভাবে মানুষ করতে হলে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সামাজিক ভিত্তি, যেখানে পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীরা একে অপরের পাশে থাকবে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি থেকে পাওয়া অভিভাবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বইটির লেখক মেরিনা লোপেস, যিনি বিভিন্ন দেশে শিশুদের মানুষ করার পদ্ধতিগুলো কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি দেখেছেন, কীভাবে কোনো কোনো সমাজে শিশুদের লালন-পালনে সমাজের সকলের অংশগ্রহণ থাকে।

লোপেস মনে করেন, আমাদের শিশুদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে হলে শুধু মা-বাবার একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি ‘গ্রাম’-এর মতো সহায়তা ব্যবস্থা, যেখানে সবাই মিলে শিশুদের দেখাশোনা করবে।

উদাহরণস্বরূপ, মোজাম্বিকের কথা বলা যায়। সেখানে ‘মা’ শব্দটি শুধু মায়েদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। পাড়ার কোনো আন্টি, যিনি শিশুদের দেখাশোনা করেন, কিংবা কোনো প্রতিবেশী, যিনি শিশুদের জন্য বাড়তি খাবার তৈরি করেন, তাদেরও ‘মা’ বলা হয়।

এই ধরনের সহযোগিতার সংস্কৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। এখানকার শিশুরা বড় হয়ে তাদের বৃদ্ধ প্রতিবেশীদের দেখাশোনা করে, যাদের তারা একসময় সাহায্য পেয়েছিল।

বাংলাদেশেও এই ধরনের পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যৌথ পরিবারে শিশুরা একসঙ্গে বেড়ে ওঠে, যেখানে দাদা-দাদি, চাচা-চাচি সবাই মিলে তাদের দেখাশোনা করেন।

শিশুদের লালন-পালনে পরিবারের প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ বিশেষভাবে কাজে লাগে।

শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়টিও বিভিন্ন দেশে ভিন্নভাবে দেখা হয়। নেদারল্যান্ডসে শিশুদের গ্রীষ্মকালে জঙ্গলে পাঠানো হয়, যেখানে তারা নিজেরাই পথ খুঁজে বাড়ি ফেরে।

এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। তবে শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি সবসময় মনে রাখতে হবে।

সিঙ্গাপুরের অভিভাবকদের মধ্যে শিশুদের প্রতি দাদা-দাদিদের একটি বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়। তারা শিশুদের স্কুল থেকে আনা-নেওয়া করেন, তাদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন এবং ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেন।

মেরিনা লোপেস মনে করেন, অভিভাবকদের সবসময় সবকিছুতে একমত হওয়ার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিশুদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের আপনজনদের কাছ থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে।

মেরিনা লোপেসের এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শিশুদের ভালোভাবে মানুষ করার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সামাজিক ভিত্তি। আমাদের দেশেও পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সহযোগিতার মাধ্যমে শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *