যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ: স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা।
বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খেলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। ইংল্যান্ডের এই খেলাটি কি অবশেষে মার্কিন মুলুকে তার শিকড় গাড়তে পারবে? ম্যানহাটনের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ব্রুকলিন ব্রিজের দিকে তাকালে একসময় চোখে পড়ে ক্রিকেট মাঠ, যেখানে ১৭৫১ সালে স্থানীয় একটি দলের সাথে লন্ডনের খেলোয়াড়দের খেলা হয়েছিল।
সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলেছে, তবে ক্রিকেটের সেই স্বপ্ন আজও অনেকের মনে বেঁচে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের ইতিহাস বেশ পুরোনো। একসময় এখানে খেলাটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কিন্তু উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বেসবলের উত্থান এবং গৃহযুদ্ধের কারণে ক্রিকেটের সেই সোনালী দিন অস্তমিত হয়।
বেসবল খেলাটি সহজ ছিল এবং এতে দ্রুত অর্থ উপার্জনের সুযোগ ছিল। জর্জ ও হ্যারি রাইটের মতো পেশাদার ক্রিকেটাররাও বেসবলের দিকে ঝুঁকেছিলেন।
তারা দুজনেই ছিলেন বেসবল হল অফ ফেমের সদস্য।
বিংশ শতাব্দীতেও কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে ফিলাডেলফিয়াতে ক্রিকেট খেলা টিকে ছিল। কিন্তু ১৯০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এ যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ না থাকায় খেলাটির প্রসার ঘটেনি।
অবশেষে ১৯৬৫ সালে তারা আইসিসির অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু ততদিনে খেলাটি শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
তবে, ক্রিকেটের পুনরুত্থানের স্বপ্ন থেমে থাকেনি। ২০০৪ সালে, আইসিসি ‘প্রজেক্ট ইউএসএ’ চালু করে। এরপর, গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজনের সুযোগ পায় যুক্তরাষ্ট্র।
এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য নিউইয়র্কের কাছে নাসাউ কাউন্টিতে একটি অস্থায়ী স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়, যেখানে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
স্টেডিয়ামটি তৈরি করতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। এছাড়াও, টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি এবং ফ্লোরিডার লডারহিলে বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের প্রসারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী ভারতীয় এবং দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠী। বর্তমানে, এখানে প্রায় ৫০ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং ১০ লক্ষের বেশি বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস।
এছাড়া, ক্যারিবিয়ান-আমেরিকানও রয়েছেন প্রায় ৪৫ লক্ষ।
মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি) -এর আগমন নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। এই লিগে বিনিয়োগ করেছেন মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যান সত্য নাদেলা, অ্যাডোবের চেয়ারম্যান শান্তনু নারায়ণ, এবং অ্যামাজনের সাথে জড়িত আনন্দ রাজারামান ও ভেংকি হারিনারায়নের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
তাদের বিনিয়োগের ফলে, এমএলসি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজন এবং ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তির ফলে খেলাটির প্রতি আগ্রহ আরও বেড়েছে।
এই টুর্নামেন্টটি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের বাজার তৈরি করতে সহায়ক হয়েছে।
তবে, সাফল্যের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত ক্রিকেট মাঠ ও প্রশিক্ষকের অভাব রয়েছে। এছাড়া, আমেরিকান দর্শকদের মধ্যে খেলাটির পরিচিতি বাড়ানো একটি কঠিন কাজ।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, এমএলসি’র বিনিয়োগ, অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে খেলাটির সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
তবে, এক্ষেত্রে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং তৃণমূল পর্যায়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান