মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, পিট হেগসেথের সংবেদনশীল সামরিক তথ্য আদান-প্রদানের কারণে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে, অনিরাপদ ‘সিগন্যাল’ মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে তথ্যের আদান-প্রদান করায় তিনি বিদেশি গোয়েন্দাদের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছেন।
জানা গেছে, হেগসেথ তাঁর স্ত্রী, ভাই এবং আরও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে একটি সিগন্যাল গ্রুপ তৈরি করেন। এরপর তিনি এই গ্রুপে ইয়েমেনে চালানো সামরিক অভিযান সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করেন। এছাড়া, তিনি পূর্বেও একই অ্যাপ ব্যবহার করে ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং একজন সাংবাদিকের সঙ্গে সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। হেগসেথের এমন কর্মকাণ্ড প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং হোয়াইট হাউসের গোপনীয়তা ঝুঁকিতে ফেলেছে। তাঁদের মতে, রাশিয়া ও চীনের গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে হেগসেথের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের দুর্বল ব্যক্তিদের ওপর নজর রাখছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেগসেথের ডিভাইস সরাসরি হ্যাক করার প্রয়োজন ছাড়াই বিদেশি সরকারগুলো তাঁর চ্যাটগুলোতে প্রবেশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হেগসেথের স্ত্রী যদি কোনো ম্যালওয়্যারযুক্ত লিঙ্কে ক্লিক করেন, তাহলে তাঁর ফোনের মাধ্যমে তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে রাশিয়া, চীন বা ইরানের মতো দেশগুলো সহজেই তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, হেগসেথের এই ধরনের কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। কারণ, এর ফলে প্রতিপক্ষের কাছে সৈন্যদের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য আক্রমণের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই ধরনের তথ্য ফাঁসের কারণে আন্তর্জাতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালায়। কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং তাঁদের যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু কর্মকর্তাদের দেওয়া নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শগুলো যদি তাঁরা নিজেরাই অনুসরণ না করেন, তাহলে প্রতিপক্ষের জন্য সুযোগ তৈরি হয়।
হেগসেথের এই ধরনের অসাবধানতা, বিশেষ করে তথ্যের নিরাপত্তা বিষয়ক বিধিনিষেধ (operational security) অনুসরণ না করার বিষয়টি বিদেশি গোয়েন্দাদের কাছে তাঁকে দুর্বল করে তুলেছে।
সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, সিগন্যাল অন্যান্য সাধারণ অ্যাপের চেয়ে কিছুটা নিরাপদ হলেও সামরিক গ্রেডের এনক্রিপশন এতে নেই। তাঁদের মতে, কর্মকর্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং গোপনীয়তা ভঙ্গের মতো ঘটনাগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
অন্যদিকে, হেগসেথ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গণমাধ্যম কিছু অসন্তুষ্ট প্রাক্তন কর্মীর কাছ থেকে পাওয়া বেনামী সূত্রের ওপর ভিত্তি করে ভিত্তিহীন খবর প্রচার করছে।”
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হেগসেথের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হেগসেথ ভালো কাজ করছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান