ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মী মোহসেন মাহদাওয়িকে যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যে আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই ছাত্রনেতাকে সম্প্রতি মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য সাক্ষাতকারের সময় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বিভাগের কর্মকর্তারা আটক করেন।
তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণেই প্রতিশোধ হিসেবে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
মোহসেন মাহদাওয়ি, যিনি ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস করছেন, ১৪ এপ্রিল ভারমন্টের কলচেস্টারে অবস্থিত ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস অফিসে নাগরিকত্বের সাক্ষাতকারে অংশ নিতে গিয়েছিলেন।
আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, সাক্ষাতকারের মাঝখানে, মুখোশ পরা ICE এজেন্টরা সেখানে প্রবেশ করে মাহদাওয়িকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়।
এরপর তাকে সেন্ট অ্যালবান্সের একটি সংশোধনাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
আটকাদেশের বিরুদ্ধে মাহদাওয়ির আইনজীবীরা এরই মধ্যে আদালতে আবেদন করেছেন এবং দ্রুত তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
তাঁদের যুক্তি, মাহদাওয়িকে আটক করে তাঁর বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।
তাঁরা আদালতকে এই ‘অবৈধ প্রতিশোধ’ বন্ধ করার এবং জামিনে মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকেও এই আবেদনের জবাব দেওয়া হয়েছে, তবে আদালতের নথিপত্র সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যারা ইসরায়েলের গাজায় আক্রমণের প্রতিবাদ করেছেন অথবা যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে, তাদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, মাহদাওয়িকে আটকের ঘটনা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
আদালতের নথিতে জানা যায়, মাহদাওয়ি ফিলিস্তিনের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।
তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন এবং আগামী মে মাসে তাঁর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
ছাত্রজীবনে মাহদাওয়ি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের তীব্র সমালোচনা করতেন এবং বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ভারমন্টের ডেমোক্রেট সিনেটর পিটার ওয়েলচ গত সোমবার কারাগারে মাহদাওয়ির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে তিনি সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের কথোপকথনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে মাহদাওয়ি জানান, তিনি ভালো আছেন এবং শান্তির জন্য কাজ করতে চান।
তাঁর মতে, ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা রয়েছে এবং তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, “আমি এই দেশের নাগরিক হতে চেয়েছি, কারণ আমি এই দেশের নীতিতে বিশ্বাস করি।”
আগামী ১ মে লুইজিয়ানার একটি ইমিগ্রেশন আদালতে মাহদাওয়ির শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তাঁর উপস্থিতি এবং কার্যক্রম ‘গুরুতরভাবে বৈদেশিক নীতির ক্ষতি করবে’।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস