অসাধ্য সাধন! প্রথম নারী হিসেবে ৪ মিনিটের মাইল দৌড়ের স্বপ্নে কিপিয়েগন

মহিলাদের মধ্যে দ্রুততম সময়ে এক মাইল দৌড়ের রেকর্ড ভাঙতে চলেছেন কেনিয়ার দৌড়বিদ ফেইথ কিপিয়েগন। আগামী ২৬শে জুন প্যারিসের স্তাদ চার্লেটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই দৌড়ে চার মিনিটের কম সময়ে এক মাইল দৌড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবেন তিনি। যদি তিনি সফল হন, তবে এটি হবে ক্রীড়া ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন।

পুরুষদের ক্ষেত্রে এক মাইল দৌড় চার মিনিটের নিচে শেষ করার কৃতিত্ব অনেক আগেই অর্জিত হয়েছে। ১৯৫৪ সালে স্যার রজার ব্যানিস্টার প্রথম এই কীর্তি গড়েন। এরপর দুই হাজারের বেশি দৌড়বিদ এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন।

তবে নারীদের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত এই অসাধ্য সাধন কেউ করতে পারেননি। কিপিয়েগন সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বর্তমানে, তাঁর এক মাইলের সেরা সময় ৪ মিনিট ৭.৬৪ সেকেন্ড।

কিপিয়েগন শুধু একজন দৌড়বিদ নন, তিনি একজন কিংবদন্তী। অলিম্পিকে একাধিক স্বর্ণপদক জয়ী এই অ্যাথলিট মধ্য-দূরত্বের দৌড়ে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছেন। তাঁর এই দুঃসাহসিক অভিযানে পাশে রয়েছে বিশ্বখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইকি।

আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিপিয়েগনকে প্রস্তুত করা হচ্ছে, যাতে তিনি এই কঠিন চ্যালেঞ্জ জয় করতে পারেন।

নাইকির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিপিয়েগনের এই মাইলফলক ছোঁয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তারা সবকিছু উজাড় করে দেবে। উন্নত জুতা এবং অন্যান্য সহায়ক সরঞ্জাম তৈরি করা হচ্ছে, যা দৌড়বিদকে সাহায্য করবে।

এছাড়াও, এই দৌড়ে কিপিয়েগনকে সাহায্য করার জন্য থাকবেন পুরুষ পেসাররা, যারা নির্দিষ্ট গতিতে দৌড়াবেন এবং বায়ুর বাধা কমাতে সাহায্য করবেন।

আমি তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাবও জিতেছি। এবার আমি নতুন কিছু করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, নিজের উপর আস্থা রাখলে এবং দলের সমর্থন থাকলে, যেকোনো কিছুই জয় করা সম্ভব।”

কিপিয়েগন

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি চাই, নারীরাও স্বপ্ন দেখতে শিখুক। তাদের স্বপ্নকে সত্যি করার সাহস থাকুক। আমি চাই, নারীরা যেন সবসময় তাদের সীমানা অতিক্রম করতে চেষ্টা করে।”

নাইকি কর্তৃপক্ষের মতে, কিপিয়েগনের এই প্রচেষ্টা অনেকটা তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত, এলিয়ুদ কিপচোগের ম্যারাথন দৌড়ের মতো। কিপচোগে দুই ঘণ্টার কম সময়ে ম্যারাথন দৌড় শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন।

যদিও তিনি সামান্য সময়ের জন্য লক্ষ্য থেকে দূরে ছিলেন, তবে তাঁর এই প্রচেষ্টা ক্রীড়ামোদী মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিপিয়েগনের জন্য কাজটি সহজ হবে না। কারণ, একজন দৌড়বিদের চার মিনিটের নিচে এক মাইল দৌড়াতে হলে, সাধারণত ১ মিনিট ৫২ বা ৫৩ সেকেন্ডের মধ্যে ৮০০ মিটার দৌড়াতে পারতে হয়।

যেখানে কিপিয়েগনের ব্যক্তিগত সেরা সময় ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। তবে নাইকির উন্নত প্রযুক্তি এবং কিপিয়েগনের কঠোর অনুশীলনে অনেকেই আশাবাদী।

কিপিয়েগন বর্তমানে কেনিয়ায় উচ্চ altitud-এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেখানে তিনি নিয়মিতভাবে দ্রুতগতির ৩০০ মিটার দৌড় প্র্যাকটিস করছেন। তাঁর কোচ প্যাট্রিক সাংয়ের মতে, কিপিয়েগন আত্মবিশ্বাসী এবং তিনি তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন।

যদি কিপিয়েগন এই রেকর্ড গড়তে পারেন, তবে তা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন হবে না, বরং বিশ্বের সকল নারীর জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং তরুণ প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা আরও বড় স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *