ডিমো মুর: অতীতের কঠোর শরীরচর্চা থেকে আত্ম-স্বীকৃতির পথে
নব্বইয়ের দশকে হলিউডের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী ডেমি মুর এখন তার অতীতের কঠোর শরীরচর্চা এবং খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মুখ খুলেছেন।
সম্প্রতি ‘পিপল’ ম্যাগাজিনের ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর’ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কীভাবে একসময় তিনি তার শরীরের ওপর ‘নির্যাতন’ চালিয়েছেন।
৬২ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী জানান, একসময় সৌন্দর্যের ধারণাটা ছিল বাইরের চাকচিক্যের ওপর নির্ভরশীল।
১৯৯৬ সালের ‘স্ট্রিপটিজ’ এবং ১৯৯৭ সালের ‘জি.আই. জেন’ এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময় তিনি কঠোর ডায়েট ও ব্যায়ামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন।
এমনকি প্রায় ২৬ মাইল পথ, অর্থাৎ ৪২ কিলোমিটার পথ, ম্যালিবু থেকে শুরু করে প্যারামাউন্ট স্টুডিও পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে যেতেন, কারণ তিনি তার বাহ্যিক রূপের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন।
কিন্তু এখন? ডেমি মুর বলেন, এখন তার কাছে সবকিছু অনেক বেশি স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত।
তিনি চান দীর্ঘ ও গুণমান সম্পন্ন জীবন।
নিজের প্রতি এখন অনেক বেশি সদয় তিনি।
‘জি.আই. জেন’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শরীরচর্চা করে পেশী তৈরি করা এই অভিনেত্রী স্বীকার করেন, সেই সময় তিনি তার শরীরের প্রতি অনেক কঠোর ছিলেন।
নিজেকে যেন শাস্তি দিতেন।
অভিনেত্রীর জীবনে মোড় পরিবর্তন হয় ‘জি.আই. জেন’ ছবির শুটিংয়ের পর।
তিনি বলেন, “আমি বহুবার আমার শরীরের পরিবর্তন ঘটিয়েছি, যা অনেক বেশি শক্তিশালী ও পেশীবহুল ছিল।
ছবিটির অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল এবং আমি এক ধরনের শক্তি অনুভব করেছিলাম।
কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম, আমি সেই শরীরটা ধরে রাখতে চাই না।
আমি অনুভব করতে চেয়েছিলাম ভেতরের শক্তিটাকে।
দীর্ঘদিন ধরে এত কঠোর পরিশ্রমের পর আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।”
এই উপলব্ধির পর ডেমি মুর তার খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার ওপর নিয়ন্ত্রণ কমান।
তিনি বলেন, “আমি খাবার নিয়ন্ত্রন করা বন্ধ করে দিই।
আত্মসমর্পণ করি এবং আমার শরীরকে সেভাবে গ্রহণ করি, যেমনটা আছে, যদিও এটা সেই শরীর নয় যেটা আমি চেয়েছিলাম।
আমি মুক্তি চেয়েছিলাম।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আমার স্বাভাবিক আকারের হওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম।
কারণ, আমি জানতাম না আমার আসল শরীর কেমন।
আমি তিনবার মা হয়েছি, ডায়েট ও ব্যায়াম করেছি এবং শরীরকে পরিবর্তন করেছি।
তাই আমি মুক্তি চেয়েছিলাম।”
১৯৯৬ সালের ‘স্ট্রিপটিজ’ ছবিতে একজন এফবিআই সেক্রেটারি থেকে স্ট্রিপারে রূপান্তরিত হওয়ার চরিত্রে অভিনয় করে ডেমি মুর মানসিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী হয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, সেই সময়ে ছবিটির জন্য তিনি ১ কোটি ২৫ লক্ষ ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন, যা ছিল রেকর্ড।
তিনি জানান, নাচের দৃশ্যে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন।
তবে নাচ, মুভমেন্ট এবং নিজের শরীরের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাওয়াটা তাকে অনেক শক্তিশালী ও স্বাধীন করেছে।
নিজের শরীরের প্রতি বর্তমানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ডেমি মুর বলেন, “ষাটের কোঠায় পৌঁছে নিজের শরীরকে সেভাবে গ্রহণ করার মধ্যে মুক্তি আছে।
শরীরের সেই রূপ, যা আমার ২০ বছর বয়সে ছিল না, এমনকি যখন আমি ২০ বা ৩০ বছর বয়সে পাওয়া শরীর নিয়েও অভিযোগ করতাম।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও এটা খুব দুর্বল এবং কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল, কারণ আমি জানতাম, এটা গল্পের প্রয়োজনে, গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখানোর জন্য।
নগ্নতা দুর্বলতা প্রকাশের জন্য খুব জরুরি ছিল।”
বর্তমানে হলিউডে বয়সের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে ডেমি মুর বলেন, “আসলে, আমরা যেমন আছি, সেই অবস্থাতেই নিজেদের গ্রহণ করাটাই আসল।
আমার শরীর যে তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে আমি সুস্থ আছি, এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
এর মানে এই নয় যে, আমি মাঝে মাঝে আয়নায় তাকিয়ে বলি না, ‘ওহ, আমি বুড়ি হয়ে গেছি’, অথবা ‘আমার মুখ ঝুলে যাচ্ছে’।
আমি অবশ্যই বলি।
কিন্তু একই সঙ্গে আমি এটা গ্রহণ করতে পারি যে, এটাই আমার আজকের রূপ এবং আমি জানি এই পরিবর্তন আমার মূল্য বা পরিচয়কে সংজ্ঞায়িত করে না।”
আজকাল ডেমি মুর তার শরীরের কথা শোনেন।
যখন শরীর কিছু খেতে চায়, বা তৃষ্ণার্ত হয়, তিনি শোনেন।
তার ভয় অনেক কমে গেছে।
ডেমি মুর বলেন, “যখন আমি তরুণ ছিলাম, মনে হতো আমার শরীর আমাকে প্রতারণা করছে।
তাই আমি এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করতাম।
এখন আমি সেই জায়গা থেকে কাজ করি না।
এখন আমার শরীরের সঙ্গে অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।”
দিনের শুরুটা হয় সংক্ষিপ্ত ধ্যানের মাধ্যমে, তারপর তিনি ডায়েরি লেখেন।
তিনি পুষ্টিকর খাবার খেতে পছন্দ করেন এবং মাংস খান না, ডিম খান।
তার মতে, সুস্থ থাকার মূল বিষয় হলো ভেতরের সৌন্দর্য।
ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কেও তিনি অবগত।
তিনি স্বীকার করেন, তিনি পারফেক্ট নন, এখনো মাঝে মাঝে রেড বুল পান করেন, তবে তা খুব বেশি নয় – একটি।
তথ্য সূত্র: পিপল