যুদ্ধ সবসময়ই শিল্পী এবং সঙ্গীতশিল্পীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যা ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে প্রতি-সংস্কৃতি আন্দোলনের সময়কার গানগুলোতে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই সময়ে মুক্তি পাওয়া গানগুলো যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সমাজে এর প্রভাবকে তুলে ধরেছিল।
সম্প্রতি, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গানের কথা নিচে তুলে ধরা হলো, যা যুদ্ধের স্মৃতি আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়।
এই তালিকায় প্রথম গানটি হল জোয়ান বায়েজের (Joan Baez) “সাইগন ব্রাইড” (Saigon Bride)। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই গানটি এক সৈনিকের গল্প বলে, যে যুদ্ধ থেকে আর ফিরে আসেনি।
এরপর আসে ভ্যান ডুংয়ের (Văn Dung) “দুং ট্রুং সন সে আন কোয়া” (“Đường Trường Sơn xe anh qua”) গানটি। এই গানটি হো চি মিন ট্রেইল নিয়ে লেখা, যা ছিল উত্তর ভিয়েতনাম থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং লাওসে সৈন্য ও রসদ সরবরাহের প্রধান পথ।
ক্রিডেন্স ক্লিয়ারওয়াটার রিভাইভালের (Creedence Clearwater Revival) “ফরচুনেট সন” (Fortunate Son) গানটি সম্ভবত ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে লেখা সবচেয়ে পরিচিত গানগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই গানটি যুদ্ধের নামে ভণ্ডামি এবং সমাজের কিছু মানুষের সুবিধাবাদী মানসিকতাকে তুলে ধরেছিল।
মারথা রিভস অ্যান্ড দ্য ভ্যান্ডেলাস (Martha Reeves & the Vandellas)-এর “আই শুড বি প্রাউড” (I Should Be Proud) গানটি যুদ্ধের কারণে প্রিয়জনকে হারানো এক নারীর কষ্টকে ফুটিয়ে তোলে।
ভিয়েতনামের প্রখ্যাত শিল্পী ত্রিহ কং সোনের (Trịnh Công Sơn) “কা দাও মে” (“Ca Dao Mẹ”) গানটি যুদ্ধের সময় এক মায়ের আত্মত্যাগের গল্প শোনায়।
১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া ক্রসবাই, স্টিলস, ন্যাশ অ্যান্ড ইয়ংয়ের (Crosby, Stills, Nash & Young) “ওহাইও” (Ohio) গানটি কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে লেখা হয়েছিল।
মার্ভিন গেয়ের (Marvin Gaye) “হোয়াটস গোয়িং অন” (What’s Going On) গানটিও যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা, যা মানুষের দুঃখ-কষ্ট এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলে।
জন লেনন, ইয়োকো ওনো এবং হারলেম কমিউনিটি কোয়ারের (John Lennon, Yoko Ono, The Plastic Ono Band with the Harlem Community Choir) “হ্যাপি ক্রিসমাস (ওয়ার ইজ ওভার)” (Happy Xmas (War Is Over)) গানটি যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা দেয়।
১৯৮৪ সালে প্রকাশিত টেলিভিশন পার্সোনালিটিজের (Television Personalities) “ব্যাক টু ভিয়েতনাম” (Back to Vietnam) গানটি যুদ্ধের কারণে মানসিক আঘাত পাওয়া এক ব্যক্তির গল্প বলে।
জার্মান থ্র্যাশ মেটাল ব্যান্ড সোডমের (Sodom) “এজেন্ট অরেঞ্জ” (Agent Orange) গানটি ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায়, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধের একটি ভয়াবহ দিক তুলে ধরে।
সবশেষে, ব্রুস স্প্রিংস্টিনের (Bruce Springsteen) “দ্য ওয়াল” (The Wall) গানটি ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই গানটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে (Vietnam Veterans Memorial) যাওয়া মানুষদের অনুভবকে প্রকাশ করে।
এই গানগুলো ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিভীষিকা, মানুষের কষ্ট এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক শক্তিশালী চিত্র তুলে ধরে। গানগুলো যুদ্ধের স্মৃতিকে আজও আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রেখেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস