ভিয়েতনাম যুদ্ধ: পর্দায় আলোড়ন তোলা ১০টি সিনেমা!

ভিয়েতনাম যুদ্ধ: সিনেমার পর্দায় যুদ্ধের বিভীষিকা

ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়, যা শুধু একটি ভৌগোলিক সংঘাত ছিল না, বরং বিশ্বজুড়ে এর গভীর প্রভাব পড়েছিল। এই যুদ্ধের স্মৃতি আজও অম্লান, এবং সিনেমা সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে, যুদ্ধের জটিলতা ও মানুষের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সাইgon-এর পতনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে, ভিয়েতনামের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এমন দশটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা যুদ্ধের বীভৎসতা এবং এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবকে তুলে ধরেছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে, ১৯৬৭ সালে, মার্টিন স্কোরসেসি নির্মাণ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘দ্য বিগ শেভ’। সিনেমায় একজন লোক শেভ করতে গিয়ে নিজের মুখ রক্তাক্ত করে তোলে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং আত্ম-বিধ্বংসী রূপক হিসেবে এই দৃশ্যটি দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে।

১৯৭৪ সালে হাই নিন পরিচালিত ‘দ্য লিটল গার্ল অফ হ্যানয়’ (হ্যানয়ের ছোট্ট মেয়ে) ছবিতে হ্যানয় শহরের ধ্বংসস্তূপে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে ফেরা এক ছোট্ট মেয়ের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটি ছিল ভিয়েতনামী সিনেমার এক মাইলফলক, যা যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও মানবিকতার চিত্র তুলে ধরে।

একই বছর মুক্তি পাওয়া পিটার ডেভিস-এর তথ্যচিত্র ‘হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডস’ (হৃদয় ও মন) -এ যুদ্ধের কারণ, মার্কিন নীতি এবং ভিয়েতনামের বাস্তবতার মধ্যেকার গভীর পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। চলচ্চিত্রটির নামকরণ করা হয়েছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসনের একটি উক্তি থেকে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “চূড়ান্ত বিজয় নির্ভর করবে সেখানকার মানুষের হৃদয় ও মনের উপর”।

মাইকেল সিমিনো’র ‘দ্য ডিয়ার হান্টার’ (১৯৭৯) ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত অন্যতম প্রভাবশালী চলচ্চিত্র। পেনসিলভানিয়ার একদল শ্রমজীবী বন্ধুর গল্প এতে দেখানো হয়েছে, যারা যুদ্ধে যোগ দিতে বাধ্য হয়। যুদ্ধের বিভীষিকা তাদের জীবনে যে পরিবর্তন আনে, তাই এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়।

ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা’র ‘অ্যাপোক্যালিপস নাও’ (১৯৭৯) জোসেফ কনরাডের ‘হার্ট অফ ডার্কনেস’ অবলম্বনে নির্মিত, যা যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক রূপকে তুলে ধরে। ফিলিপাইনে চিত্রায়িত এই সিনেমা যুদ্ধের বিশৃঙ্খলা, নৈতিক অবক্ষয় এবং মানুষের ভেতরের dark side-কে grand ভাবে উপস্থাপন করে।

অলিভার স্টোন-এর ‘প্লাটুন’ (১৯৮৬) ছবিতে ভিয়েতনামে একজন পদাতিক সৈন্যের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং এর মানসিক প্রভাব এতে অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে চিত্রিত হয়েছে।

স্ট্যানলি কুবরিকের ‘ফুল মেটাল জ্যাকেট’ (১৯৮৭) যুদ্ধবিরোধী সিনেমার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। সিনেমার দুটি অংশে যুদ্ধের বিভীষিকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে: প্রশিক্ষণ শিবিরে সৈন্যদের প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং ১৯৬৮ সালের টেট আক্রমণের দৃশ্য।

ওয়ার্নার হার্জগ-এর ‘লিটল ডিয়েটার নিডস টু ফ্লাই’ (১৯৯৭) ছবিতে দেখানো হয়েছে জার্মান-মার্কিন পাইলট ডিয়েটার ডেংলারের জীবন-সংগ্রাম, যিনি লাওসে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বন্দী হন এবং পরে জঙ্গল থেকে পালিয়ে আসেন।

২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এরল মরিসের ‘দ্য ফগ অফ ওয়ার’ (যুদ্ধের কুয়াশা) ছবিতে সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট এস. ম্যাকনামারার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যেখানে তিনি যুদ্ধের কারণ ও প্রভাব নিয়ে কথা বলেন।

পরিশেষে, স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর ‘দ্য পোস্ট’ (২০১৭) সিনেমায় ১৯৭০-এর দশকে ‘পেন্টাগন পেপার্স’ প্রকাশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। এই সিনেমায় ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার প্রকাশক ক্যাথরিন গ্রাহাম-এর সাহসী ভূমিকা এবং যুদ্ধের সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতার গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এই চলচ্চিত্রগুলো ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিভিন্ন দিক উন্মোচন করে, যা যুদ্ধের স্মৃতিকে অম্লান করে রেখেছে। সিনেমাগুলো যুদ্ধের ভয়াবহতা, মানবিক যন্ত্রণা এবং এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সম্পর্কে আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *