কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ হামলায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। এই ঘটনার জেরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কাও বাড়ছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে, যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান, সেখানে মঙ্গলবার বন্দুকধারীদের হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন ভারতীয় নাগরিক এবং ১ জন নেপালী পর্যটকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর ভারত সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করেছে, গুরুত্বপূর্ণ জলচুক্তি স্থগিত করেছে এবং একটি সীমান্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীর, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিতর্কিত একটি অঞ্চল, সেখানে কয়েক দশক ধরে স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার দাবিতে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই অঞ্চলের পরিস্থিতি উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘাতপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত।
হামলার পর, একটি অপরিচিত জঙ্গিগোষ্ঠী, ‘দ্য রেসিস্টেন্স ফ্রন্ট’ (TRF), এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। তবে, ভারত সরকার এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
ঘটনার পর ভারত সরকার বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমানো, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা সীমিত করা এবং নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে সামরিক উপদেষ্টা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর থাকা সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা। এই চুক্তিটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জলবণ্টন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। হামলার পর পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেক ভ্রমণ বাতিল হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এই ঘটনার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কাশ্মীর উপত্যকায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে, যেখানে স্থানীয়রা নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন এবং এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে সরাসরি দায়ী করা হয়নি, তবে পাকিস্তানকে ‘ cross-border terrorism’-এর মদদ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে এবং তারা খুব শীঘ্রই একটি জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠক করবে।
বর্তমানে সবার দৃষ্টি এখন ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার দিকে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন