মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা কি বদলে যাচ্ছে? ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণ শক্তি বিষয়ক নতুন গবেষণা এই প্রশ্নে নতুন মোড় এনে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা এই মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁদের মূল আগ্রহের বিষয় হল, এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের শেষ পরিণতি কি হতে পারে?
সাধারণভাবে, বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এই মহাবিশ্বের বিস্তার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। নক্ষত্রগুলো তাদের শক্তি হারাবে, এবং একসময় সবকিছু শীতল ও অন্ধকার হয়ে যাবে। এই ধারণাকে ‘হিট ডেথ’ বা ‘বিশাল শীতলতা’ বলা হয়। এটি ছিল বিজ্ঞানীদের একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা, যা আমাদের মহাবিশ্বের বর্তমান আচরণ সম্পর্কিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি, ডার্ক এনার্জি স্পেক্ট্রোস্কোপিক ইনস্ট্রুমেন্ট (DESI) নামক একটি প্রকল্পের নতুন তথ্য এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই গবেষণা ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণশক্তির প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা পাল্টে দিচ্ছে। এই ডার্ক এনার্জি আসলে কি? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি মহাবিশ্বের ৭0 শতাংশ শক্তি তৈরি করে।
১৯90-এর দশকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে, বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের ফলে মহাবিশ্বের প্রসারণ শুরু হওয়ার পরে, তা ধীরে ধীরে আরও দ্রুত হচ্ছে। এই প্রসারণের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা ‘ডার্ক এনার্জি’-র কথা বলেন। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, স্থানকালের নিজস্ব প্রসারণের ক্ষমতা রয়েছে। এই ধারণা থেকেই ‘কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট’ বা মহাজাগতিক ধ্রুবকের জন্ম, যা ডার্ক এনার্জির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট অনুযায়ী, মহাবিশ্বের প্রসারণ একই হারে চলতে থাকবে এবং একসময় ‘হিট ডেথ’ ঘটবে। তবে, DESI-এর নতুন গবেষণা বলছে, ডার্ক এনার্জি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি এমনটা হয়, তবে প্রসারণ হয়তো ধীরে হবে, এমনকি একসময় বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এমনকী, ডার্ক এনার্জি যদি আকর্ষণীয় শক্তিতে পরিণত হয়, তবে মহাবিশ্বের সংকোচনও ঘটতে পারে, যাকে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ বলা হয়।
অন্যদিকে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি ডার্ক এনার্জি দুর্বল হতে শুরু করে, তাহলেও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। কারণ, এমনও হতে পারে যে ডার্ক এনার্জি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং এর ফলে ‘বিগ রিপ’ বা বিশাল ফাটল দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মহাবিশ্ব ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।
তবে, ডার্ক এনার্জি যদি একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলেও কি সবকিছু ঠিক থাকবে? হয়তো না। নক্ষত্রগুলো তাদের ভেতরের হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে পরিণত করতে গিয়ে একসময় বিস্ফোরিত হবে অথবা নিভে যাবে। ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরগুলোও ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়ে, মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি এখনো একটি রহস্য।
DESI-এর ফলাফল যদি সত্য হয়, তবে এটি সম্ভবত ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করবে। এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা হয়তো মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শুরু করবেন। নিঃসন্দেহে, ডার্ক এনার্জি নিয়ে গবেষণা আমাদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দেয়, এবং এর ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক