ক্যান্সার: প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের গুরুত্ব এবং আমাদের করণীয় ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, যা সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে একটি হলো ‘স্টেজ ০ ক্যান্সার’। এই পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত করা গেলে, চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী বেয়ন্সের মা, টিনা নোয়েলস, তার স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায় অর্থাৎ ‘স্টেজ ০’-তে রোগ শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভাবে তার রোগ শনাক্তকরণে দেরি হয়েছে।
সাধারণত, ক্যান্সারের চারটি প্রধান স্তর (স্টেজ I, II, III, এবং IV) সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকে।
কিন্তু ‘স্টেজ ০ ক্যান্সার’ হল ক্যান্সারের একেবারে প্রাথমিক অবস্থা।
এই পর্যায়ে, শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হতে শুরু করে, তবে সেগুলো এখনো ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়নি এবং আশেপাশের টিস্যুতেও ছড়ায় না।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই পর্যায়ে ক্যান্সার কোষগুলো তাদের উৎপত্তিস্থলেই সীমাবদ্ধ থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘স্টেজ ০ ক্যান্সার’-কে অনেক সময় ‘ইন সিটু কার্সিনোমা’ বলা হয়, যার অর্থ হল ‘যেখানে আছে সেখানেই’।
উদাহরণস্বরূপ, স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, এই অবস্থাকে ‘ডাক্টাল কার্সিনোমা ইন সিটু’ (DCIS) বলা হয়।
‘ডাক্তাল’ শব্দটি স্তনের দুধ নালীকে নির্দেশ করে।
এই অবস্থায়, ক্যান্সার কোষগুলো দুধের নালীতে সীমাবদ্ধ থাকে এবং আশেপাশের টিস্যুতে ছড়াতে শুরু করে না।
অন্যান্য পর্যায়ের ক্যান্সারের থেকে ‘স্টেজ ০ ক্যান্সার’ আলাদা।
সাধারণত, ক্যান্সার যখন শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা মারাত্মক আকার ধারণ করে।
কিন্তু ‘স্টেজ ০’-তে রোগ ধরা পড়লে, চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার ফলে রোগীর জীবন বাঁচানো সহজ হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার-এর প্রাথমিক অবস্থা অর্থাৎ ‘স্টেজ ০’-তে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ, মহিলাদের জন্য নিয়মিত ‘ম্যামোগ্রাম’ পরীক্ষার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা যেতে পারে।
আমাদের দেশেও এখন ক্যান্সার স্ক্রিনিং-এর বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা, যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন।
এছাড়াও, ক্যান্সার স্ক্রিনিং-এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, কিছু ক্যান্সারের জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমা অনুযায়ী স্ক্রিনিং করানো উচিত।
যেমন, ২৫ বছর বয়স থেকে মহিলাদের জরায়ু মুখের ক্যান্সার এবং ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়স থেকে স্তন ক্যান্সারের স্ক্রিনিং করানো উচিত।
সুতরাং, ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া অপরিহার্য।
স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক