ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের উপর নির্যাতনের অভিযোগ, বিতর্কের কেন্দ্রে বিদ্যালয়
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরুর কন্যা হেলেন পারলান্ট ১৯৮০-র দশকে একটি ক্যাথলিক স্কুলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অভিযোগ করেছেন। বিতর্কিত নটর-ডেম দে বেথারাম নামক ওই বিদ্যালয়টি বর্তমানে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কারণে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে।
৫৩ বছর বয়সী হেলেন জানিয়েছেন, ১৪ বছর বয়সে গ্রীষ্মকালীন শিবিরে থাকাকালীন এক সিনিয়র পুরোহিত তাকে সহপাঠীদের সামনে মারধর করেন। তবে, তিনি এই বিষয়ে কখনো তার বাবা ফ্রাঁসোয়া বাইরুকে কিছু জানাননি। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮০-র দশকে।
বাইরুর কন্যা জানিয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর তিনি এতটাই ভীত ছিলেন যে বাবার কাছে কিছু বলতে পারেননি।
বেথারাম স্কুলের বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলো বর্তমানে ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলের রাজনীতিবিদ বাইরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি সম্ভবত কয়েক দশক ধরে চলা ব্যাপক সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা জানতেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
বাইরুর তিনটি সন্তানও এই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং তার স্ত্রী সেখানে ধর্মীয় শিক্ষকতা করতেন। যদিও বাইরু বরাবরই এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
হেলেন পারলান্ট, যিনি নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, বলেছেন, “একদিন রাতে, যখন আমরা আমাদের স্লিপিং ব্যাগ গোছাচ্ছিলাম, ফাদার লার্টিগুয়েত হঠাৎ আমার চুল ধরে টেনে কয়েক মিটার দূরে নিয়ে যান এবং সেখানে আমাকে কিল-ঘুষি মারেন, বিশেষ করে পেটে… আমি ভয়ে প্রস্রাব করে ফেলি এবং সারা রাত ভেজা অবস্থায়, ঘুমের ব্যাগে কুঁকড়ে ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “বেথারাম একটি সম্প্রদায়ের মতো ছিল, যেখানে ছাত্র ও শিক্ষকদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হতো, যাতে তারা মুখ না খোলে।”
গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে, বেথারামের পুরোহিত ও কর্মীদের বিরুদ্ধে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে প্রায় ২০০টি আইনি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৯৯০টি যৌন সহিংসতার অভিযোগ।
এর মধ্যে দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাক্তন এক তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে এক নাবালিকাকে যৌন নিপীড়ন এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও কিছু অভিযোগের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় সেগুলোর বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না।
বামপন্থী আইনপ্রণেতারা ফেব্রুয়ারিতে সংসদে বাইরুর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ১৯৯০-এর দশকে যখন তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ে ব্যাপক শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন। সংসদ সদস্য পল ভানিয়ার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, আপনি শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিষয়ে আপনার জ্ঞান গোপন করতে সংসদ সদস্যদের মিথ্যা বলেছেন, যা আপনার তৎকালীন দায়িত্বের পরিপন্থী ছিল।”
জবাবে বাইরু বলেন, “সহিংসতা বা যৌন সহিংসতা সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি।” তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি “কৃত্রিম বিতর্ক” তৈরি করা হচ্ছে।
বাইরুর ছয় সন্তানের মধ্যে তিনজনই বেথারামে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তিনি বেশ কয়েক দশক ধরে ওই এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক ও পৌর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি পও শহরের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংসদের একটি কমিশন সম্প্রতি দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি শুনেছে, যেখানে বাইরুর এই দাবির বিরোধিতা করা হয়েছে যে বেথারাম স্কুল সম্পর্কিত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না।
আলাইন হোনট্যাংস, যিনি ১৯৯৮ সালে স্কুলের প্রধানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন, হলফ করে বলেন যে, তৎকালীন স্থানীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট বাইরুর হস্তক্ষেপে বিচারক তদন্তে দেরি করার কথা জানিয়েছিলেন। বিচারক ক্রিশ্চিয়ান মিরান্দে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি বাইরুর সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তবে তিনি তদন্তকারীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন কিনা, তা মনে করতে পারছেন না।
বাইরু সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কখনোই কোনো আইনি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিনি।” আগামী ১৪ মে সংসদীয় কমিশনে বাইরুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান