গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আবারও নিহত বহু, উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শিশুদেরও রেহাই নেই।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ১১ জন শিশুও রয়েছে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
ফিলিস্তিনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
বুধবার (গতকাল) গাজার আল-তুফ্ফা এলাকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া একটি স্কুলের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। এতে ১১ জন নিহত হয় এবং স্কুলটিতে আগুন ধরে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পোড়া মরদেহগুলো বের করা হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং ফিলিস্তিনের গণমাধ্যম এই ঘটনার ছবি প্রকাশ করেছে।
ছবিতে দেখা যায়, নিহতদের সাদা কাপড়ে মুড়ে আল-শিফা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী, উম্মে মোহাম্মদ আল-হুইতি, রয়টার্সকে জানান, “আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ বিস্ফোরণ হলো। তাকিয়ে দেখি পুরো স্কুলে আগুন লেগেছে, চারদিকে শুধু আগুন আর আগুন।
মানুষজন চিৎকার করছিল, আর পুরুষরা পুড়ে যাওয়া শিশুদের কোলে নিয়ে ‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ, তুমি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই’ বলে আহাজারি করছিল।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) সাধারণত এমন ঘটনার ওপর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করে না। তবে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা হামাসের বিরুদ্ধে বেসামরিক অবকাঠামোকে আড়াল করার অভিযোগ করে থাকে।
হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল গাজায় বিমান ও স্থল অভিযান জোরদার করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
ইসরায়েল এই অঞ্চলে তাদের নিরাপত্তা অঞ্চল তৈরি করতে চাইছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১,৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামাসের হামলায় নিহত হয়েছিল ১,২০০ জন এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল।
এখনও গাজায় বন্দী অবস্থায় আছে ৫৯ জন ইসরায়েলি।
যুদ্ধ শুরুর আগে, ইসরায়েল গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করে।
বর্তমানে সেখানে খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বুধবার ইসরায়েলকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “অনাহার, রোগ এবং মৃত্যুর চরম ঝুঁকি রয়েছে।”
আলোচনা শুরুর জন্য কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় চেষ্টা চললেও, এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি।
জানা গেছে, নতুন একটি প্রস্তাবে পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য যুদ্ধবিরতি এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে বন্দী হওয়া সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
হামাস প্রতিনিধি দল প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার রাতে মিশরের রাজধানী কায়রোতে গিয়েছিল।
তবে ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত এই প্রস্তাবের প্রতি কোনো সাড়া দেয়নি।
হামাসকে নিরস্ত্র করা বা ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে আগামী মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে একটি সমাধানে পৌঁছানো যায়।
পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন।
তিনি হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের বন্দী করে রাখা ইসরায়েলকে গাজায় হামলার অজুহাত তৈরি করে দিচ্ছে।
তবে হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসেম নাইম আব্বাসের এই মন্তব্যকে “আপত্তিকর” বলে অভিহিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে হামাস ও আব্বাসের দল ফাতাহ’র মধ্যে সংক্ষিপ্ত একটি গৃহযুদ্ধ হয়েছিল, যেখানে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান