**কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ২৬ জন, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক অবনতির পথে ভারত**
জম্মু ও কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে আরও একবার অবনতির দিকে। এই ঘটনার জেরে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিককে ডেকে পাঠিয়েছে এবং ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
বুধবার গভীর রাতে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স সাদ আহমদ ওয়ারাইচকে তলব করা হয়, এমনটাই জানা গেছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, জল-বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা এবং ভিসা ছাড়া ভারতীয় ভিসায় ভ্রমণ করা পাকিস্তানী নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। এছাড়াও, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ইসলামাবাদে তাদের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এবং সেখানে ভারতীয় মিশনের কর্মী সংখ্যাও কমানো হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসের সকল প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকে ‘ persona non grata ’ ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার কাশ্মীরে এই সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, কাশ্মীরে ‘বহিরাগতদের’ বসতি স্থাপন এবং ‘ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন’-এর কারণেই তারা এই হামলা চালিয়েছে।
ভারত সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং ঘটনার পর পরই তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদের অবহিত করার কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফও ইসলামাবাদের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে। দুই দেশই এই অঞ্চলের উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে অতীতে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় এই অঞ্চলের উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ।
জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার বিকল্প নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Water Treaty) উভয় দেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদ এবং এর উপনদীগুলোর জলবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়। এই চুক্তিটির স্থগিতাদেশ আঞ্চলিক জল সম্পদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান