বিজ্ঞানীদের নতুন রঙের প্রতিরূপ: শিল্পী সেম্পলের চাঞ্চল্যকর ঘোষণা!

লেজারের আলোয় দেখা ‘নতুন’ রঙের প্রতিরূপ তৈরির ঘোষণা দিলেন ব্রিটিশ শিল্পী।

আলো ঝলমলে এক জগতে বাস করি আমরা, যেখানে রঙের খেলা অবিরাম। সম্প্রতি, ব্রিটেনের একজন শিল্পী, স্টুয়ার্ট সেম্পল, এমন একটি রঙের প্রতিরূপ তৈরি করেছেন যা বিজ্ঞানীদের মতে লেজারের আলো ব্যবহার করে তাঁরা আবিষ্কার করেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of California, Berkeley) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা মানুষের চোখের রেটিনার কোষগুলোতে লেজারের আলো ফেলে এমন একটি রং তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

আর সেই রংটিই এবার নিজের রঙে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ব্রিটিশ শিল্পী।

বিজ্ঞানীরা তাঁদের আবিষ্কৃত এই নতুন রঙের নাম দিয়েছেন ‘ওলো’। কিন্তু স্টুয়ার্ট সেম্পল তাঁর তৈরি করা রঙের নাম দিয়েছেন ‘ইয়োলো’। নিজের ওয়েবসাইটে এই রং বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বিশেষ করে শিল্পীদের জন্য এই রঙের দাম রাখা হয়েছে ২৯.৯৯ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪,০০০ টাকার কাছাকাছি। আর সবার জন্য এর দাম রাখা হয়েছে ১০,০০০ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ লক্ষ টাকার সমান।

এই ‘ইয়োলো’ রং তৈরির প্রক্রিয়াটিও বেশ আকর্ষণীয়। সেম্পল সাধারণ উপাদানের সঙ্গে ফ্লুরোসেন্ট অপটিক্যাল ব্রাইটেনার্স মিশিয়েছেন, যা অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে দৃশ্যমান নীল আলো নির্গত করে।

এরপর স্পেক্ট্রোমিটার ব্যবহার করে তিনি তাঁর তৈরি করা রঙের তীব্রতা বিশ্লেষণ করেন, যা মূল ‘ওলো’ রঙের কাছাকাছি।

এর আগেও সেম্পল এমন কিছু কাজ করেছেন যা শিল্পী মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল।

তিনি দাবি করেছেন, তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে কালো এবং গোলাপী রং তৈরি করেছেন। এমনকি, শিল্পী আনিশ কাপুরের একচেটিয়াভাবে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত বিশ্বের সবচেয়ে কালো রঙের অধিকারের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের চোখে আলো পড়লে, রেটিনার কোণ কোষগুলি (cones) সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আমরা রং দেখতে পাই।

এই কোণ কোষগুলি তিনটি ভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যা দীর্ঘ (L), মাঝারি (M) এবং ছোট (S) তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শনাক্ত করতে পারে।

মূলত, লাল আলো L কোষগুলিকে এবং নীল আলো S কোষগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। কিন্তু M কোষগুলি মাঝখানে থাকে এবং সাধারণত কোনো প্রাকৃতিক আলো তাদের একা সক্রিয় করতে পারে না।

বার্কলের বিজ্ঞানীরা এই M কোষগুলিকে বিশেষভাবে সক্রিয় করে ‘ওলো’ রং তৈরি করেছেন, যা মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টির বাইরে।

তবে, বার্কলের বিজ্ঞানী দলের সদস্য অস্টিন রোরডা জানিয়েছেন, তিনি সেম্পলের রং কিনতে আগ্রহী, তবে এত বেশি দামে নয়।

এমনকি তিনি তাঁর এক কাজিনকে এই রং ব্যবহার করে কিছু শিল্পকর্ম তৈরি করতে বলতে পারেন। রোরডার মতে, “ওলো”-র মতো হুবহু রং তৈরি করা সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *