বাদাম এলার্জি: নতুন গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্কদের জীবন বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা!

নতুন গবেষণা: বাদাম এলার্জি আক্রান্ত বয়স্কদের জন্য আশার আলো।

বাদাম এলার্জি, যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, অনেক মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। সামান্য বাদাম খেলেও শ্বাসকষ্ট, বমি বা আরও গুরুতর প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

এই উদ্বেগের কারণ হলো, বাদাম এলার্জি প্রতিকারের তেমন কোনো কার্যকরী উপায় এতদিন ছিলো না।

তবে সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিতভাবে অল্প পরিমাণে বাদাম খাওয়ার মাধ্যমে বয়স্কদেরও এই এলার্জি থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।

লন্ডনের কিং’স কলেজ-এর গবেষকরা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। “গ্রোন আপ পিনাট ইমিউনোথেরাপি” (GUPI) নামক এই ট্রায়ালে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২১ জন এলার্জি আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে সামান্য পরিমাণে বাদামের গুঁড়ো মিশ্রিত খাবার দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে এই গুঁড়োর পরিমাণ বাড়ানো হয়।

কয়েক মাস ধরে এই প্রক্রিয়া চালানোর পর, অংশগ্রহণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ (৬৭%) পাঁচটির সমান বাদাম খেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি।

গবেষণা দলের প্রধান, অধ্যাপক স্টিফেন টিল বলেন, “জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী প্রতিক্রিয়ার ভয়ে বাদাম এলার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সব সময় উদ্বেগের মধ্যে থাকেন।

এই গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়স্কদেরও এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।”

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ২৮ বছর বয়সী ক্রিস বলেন, “ছোটবেলায় আমার বাদাম এলার্জি ধরা পড়েছিল।

সামান্য ভুলের কারণে জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। এখন আমি প্রতিদিন সকালে নাস্তার সাথে ৪টি বাদাম খাই এবং আমার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় থাকে।

আগে সামান্য ভুলও বড় উদ্বেগের কারণ ছিল, এখন সেই ভয়টা নেই।”

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে খুব অল্প পরিমাণে (০.৮ মিলিগ্রাম) বাদামের গুঁড়ো দেওয়া হয়েছিল, যা ধীরে ধীরে ১ গ্রামের (প্রায় চারটি বাদামের সমান) পরিমাণে উন্নীত করা হয়।

এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কারো ৮ মাস, আবার কারো ক্ষেত্রে কোভিড পরিস্থিতির কারণে ২৩ মাস পর্যন্ত সময় লেগেছে।

যদিও এই চিকিৎসা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এটিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহারের আগে আরও বড় আকারের গবেষণা প্রয়োজন, তবে এই গবেষণাটি বয়স্কদের বাদাম এলার্জি নিরাময়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

কিং’স কলেজ লন্ডনের ন্যাশনাল এলার্জি স্টাডি গ্রুপের প্রধান অধ্যাপক অ্যাডাম ফক্স বলেন, “সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে, খাদ্য এলার্জির চিকিৎসা শিশুদের জন্যই বেশি উপযোগী।

তবে এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, বয়স্কদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে এবং এটি তাদের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।”

এই গবেষণা এলার্জি চিকিৎসার জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভবিষ্যতে, এর মাধ্যমে বাদাম এলার্জিতে আক্রান্ত আরও অনেক মানুষের জীবন আরও স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *