বিয়ে ভাঙন থেকে সন্তান জন্ম, মেলিন্ডা গেটসের জীবনে ঝড়: বিস্ফোরক তথ্য!

মেলিন্ডা গেটস: নতুন বইয়ে বিল গেটস থেকে বিচ্ছেদ এবং জীবনের নানা দিক

বিখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বিল গেটসের প্রাক্তন স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস তার নতুন বই ‘দ্য নেক্সট ডে’-তে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিক নিয়ে তিনি খোলামেলা আলোচনা করেছেন। আগামী ১৫ এপ্রিল বইটি বাজারে আসার কথা রয়েছে।

বইতে মেলিন্ডা গেটস লিখেছেন, জীবনের গত কয়েক বছরে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা তিনি আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। ৬০ বছর বয়সে তিনি একদিকে যেমন কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন, তেমনি নারী ও শিশুদের সাহায্যার্থে বিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন। এছাড়া, বিবাহবিচ্ছেদের মতো কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, যা এখনো তার কাছে কষ্টের।

মেলিন্ডা জানান, তিনি চেয়েছেন তার জীবনের গল্প সবার সামনে তুলে ধরতে, যাতে অন্য কেউ হয়তো উপকৃত হতে পারেন। বইটিতে তার জীবনের অনেক অজানা দিক উন্মোচিত হয়েছে।

বইটিতে মেলিন্ডা গেটস তার দুঃস্বপ্নের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ২০১৯ সালের শেষ দিকে তিনি প্রায়ই একটি সুন্দর বাড়ি ভেঙে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি জানান, তার অবচেতন মন যেন তাকে কিছু বলতে চাইছে।

মেলিন্ডা গেটস আরও লিখেছেন, বিল গেটস সবসময় তার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন না। তিনি বিলের সঙ্গে জেফরি অ্যাপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রকাশিত খবরগুলো নিয়েও কথা বলেছেন। বিল গেটস অবশ্য এই সম্পর্ককে ভুল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মেলিন্ডার ভাষায়, তাদের সম্পর্কের অবনতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তিনি তাদের তিন সন্তানকে নিয়ে একটি পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং অনুভব করেছিলেন, তিনি যেন শূন্যতায় পতিত হচ্ছেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা নিউ মেক্সিকোতে একসঙ্গে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা তাদের সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই সময় মেলিন্ডা জানান, তিনি আলাদা থাকতে চান। তিনি তাদের ছোট মেয়ে ফোয়েবিকে নিয়ে তাদের বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন, যিনি তখন হাই স্কুল ফাইনাল ইয়ারে পড়তেন।

মেলিন্ডা জানান, এটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কথোপকথনগুলোর একটি। বিল গেটস তখন দুঃখিত এবং হতাশ হয়েছিলেন, তবে তিনি বিষয়টি সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন।

পরে তারা গেটস ফাউন্ডেশনে একসঙ্গে কাজ করা চালিয়ে যান, তবে আলাদাভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তাদের একসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হতো, যা কিছুটা অস্বস্তিকর ছিল।

এরপর আগস্ট মাসে মেলিন্ডা বিল গেটসকে জানান, তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান। তাদের মধ্যে দীর্ঘ, এমনকি আবেগপূর্ণ আলোচনাও হয়েছিল। এরপরে তিনি গাড়িতে করে বাড়ি ফেরার পথে একটি পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে তাদের পছন্দের একটি গান শোনেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়াটি ছিল কঠিন এবং দীর্ঘ। মেলিন্ডা গেটস জানান, বিল গেটস ছিলেন বিশ্বের অন্যতম কঠিন দর কষাকষিকারীদের একজন। তাই তিনি আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছিলেন। অবশেষে, তাদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর দ্রুত সবকিছু ঘটে যায়।

তাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে জানানোর পর ২০২১ সালের ৩ মে তারা যৌথ বিবৃতি দেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সময় মেলিন্ডা তার মেয়ে ফোয়েবির সঙ্গে ছিলেন। ফোয়েবি তাকে বিচ্ছেদ নিয়ে তৈরি কিছু মজার মিম দেখালে তারা হেসেছিলেন, কিন্তু মেলিন্ডার মন ভালো ছিল না।

বইতে মেলিন্ডা গেটস তাদের বিয়ের একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে দেখা যায়, কেক কাটার সময় বিল গেটস সবার জন্য এক টুকরো কাটছিলেন, যা মেলিন্ডার ভালো লাগেনি। তিনি বলেন, বিল গেটসকে দেখে তার হাসি পেয়েছিল।

মেলিন্ডা তার প্রথম সন্তান জেনিফারের গর্ভধারণের সময় প্রায় ৭৯ পাউন্ড ওজন বাড়িয়েছিলেন, যা চিকিৎসকদের পরামর্শের দ্বিগুণেরও বেশি ছিল। মেলিন্ডা জানান, সেই সময়ে তিনি স্বাধীনতার অনুভূতি অনুভব করেছিলেন।

মেলিন্ডার ভাষায়, ‘আমি আমার জীবনে এমন পরিবর্তন দেখেছি যা আমি চেয়েছিলাম, যার বিরুদ্ধে লড়েছি এবং যা আমি কখনও কল্পনাও করিনি। ৫৮ বছর বয়সে, আমি অপ্রত্যাশিতভাবে ঠাকুরমা হয়েছি।’

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বড় মেয়ে তার প্রথম নাতি-নাতনির জন্ম দেন। মেলিন্ডা গেটস বর্তমানে দুই নাতির ঠাকুরমা। তিনি জানান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত তার কাছে আনন্দের।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *