অস্ট্রেলিয়ার খনি শহরগুলোতে ‘স্কিম্পি’ বারের জগৎ: নারীদের জীবন ও জীবিকা
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার খনি শহরগুলোতে একটি বিশেষ ধরনের সংস্কৃতি বিদ্যমান, যেখানে বারগুলোতে স্বল্প পোশাকে নারীরা পান পরিবেশন করেন। এই নারীদের ‘স্কিম্পি’ বলা হয়। সম্প্রতি, এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে *দ্য গার্ডিয়ান*।
প্রতিবেদনটিতে এই সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে নারীদের জীবন ও জীবিকা, এই পেশার ভালো-মন্দ এবং সেখানকার সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
‘স্কিম্পি’ মূলত এমন একজন বার-কর্মী যিনি খনি শ্রমিকদের জন্য স্বল্প পোশাকে পান পরিবেশন করেন। এই কাজটি সাধারণত ‘ফ্লাই-ইন ফ্লাই-আউট’ (FIFO) প্রকৃতির হয়ে থাকে, যেখানে কর্মীরা কয়েক সপ্তাহ পরপর এক শহর থেকে অন্য শহরে যান।
এই পেশা অস্ট্রেলিয়া এবং বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারীদের আকর্ষণ করে। তারা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করেন এবং শহরগুলোতে কয়েক সপ্তাহ পরপর তাদের স্থান পরিবর্তন হয়।
ফটোগ্রাফার এম এলেন বার্নস, যিনি ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এই ‘স্কিম্পি’ সংস্কৃতির ছবি তুলেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, কিভাবে তিনি প্রথম কালগুরলি শহরে আসেন এবং সেখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হন।
বার্নস-এর মতে, এই জগৎটা কিছুটা হলেও বাস্তবতার থেকে দূরে ছিল। কারণ, একদিকে যখন বাইরের পৃথিবী লকডাউনে ছিল, তখন সেখানে যেন উৎসব চলছিলো। তিনি এখানকার ‘গোল্ড বার’-এর জন্য ছবি তোলা শুরু করেন এবং পরে ‘স্কিম্পি’ নামে একটি ছবি-সংকলন প্রকাশ করেন।
এই কাজের অর্থনৈতিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। একজন ‘স্কিম্পি’ ভালো উইকেন্ডে টিপস হিসেবে প্রায় ৫,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩,৮০,০০০ বাংলাদেশী টাকা) পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।
এই পেশা অনেক নারীর জন্য আর্থিক স্বাধীনতা নিয়ে আসে। অনেকেই এই কাজের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সক্ষম হন।
তবে, এই পেশা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কিছু নারী মনে করেন, এটি তাঁদের ক্ষমতায়ন করে, আবার কারো কারো মতে, এটি তাঁদের সম্মানহানি করে। একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, এই শিল্পের নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক এখনো বিদ্যমান।
কেউ কেউ মনে করেন, এই ধরনের কাজ নারীদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।
বার্নস তাঁর ছবিতে নারীদের ব্যক্তিগত জীবন এবং তাঁদের ভেতরের গল্পগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি তাঁদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাঁদের চিন্তা প্রকাশ করেছেন।
কেউ এই পেশায় আসার কারণ হিসেবে আর্থিক স্বাধীনতাকে উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ একাকীত্ব দূর করতে এখানে এসেছেন। কারো কারো মতে, এই কাজটি তাঁদের এক ধরনের সামাজিক সমর্থন দেয়, যা হয়তো অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন।
এই ধরনের কাজের সামাজিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। খনি শহরগুলোতে সাধারণত পুরুষ শ্রমিকদের আধিক্য থাকে, এবং সেখানে একাকিত্ব একটি বড় সমস্যা। কিছু ‘স্কিম্পি’ মনে করেন, তাঁরা সেই একাকী পুরুষদের সঙ্গ দেন এবং তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করেন।
এই সংস্কৃতি সময়ের সাথে সাথে কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অতীতে, এই ধরনের কাজকে নারীদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখা হতো।
তবে, বর্তমানে নারীবাদী আন্দোলনের কারণে এই বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সবশেষে, ‘স্কিম্পি’ সংস্কৃতি অস্ট্রেলিয়ার খনি শহরগুলোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি একদিকে যেমন নারীদের জন্য আর্থিক সুযোগ তৈরি করে, তেমনি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিছু বিতর্ক।
এই সংস্কৃতির ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই রয়েছে, যা সেখানকার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনের একটি প্রতিচ্ছবি।
তথ্য সূত্র: *দ্য গার্ডিয়ান*